
তাপদাহে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
গৌতম কুমার মহন্ত, নওগাঁঃ বাণিজ্যিকভাবে আমের রাজ্যখ্যাত নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলে ইতিমধ্যেই বাগান গুলোতে পাকা আমের ঘ্রাণ আসতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ অঞ্চলের মানুষরা জৈষ্ঠ্য মাসের পাকা আমের স্বাদ নিতে শুরু করবে।মধ্যেই বরেন্দ্র অঞ্চলের কিছু বাগান থেকে পাকা আম নামাতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাগান মালিকরা।আগামী সপ্তাহের দিকে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।বৈরী আবহাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে চলা তাপদাহে পুড়ছে নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল।দীর্ঘদিন এ অঞ্চলে কাংক্ষিত বৃষ্টি না হওয়াসহ প্রচন্ড তাপদাহে আম পাকার আগেই গাছ থেকে আম ঝড়ে পড়ায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে বাগান মালিকরা।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলার সদরসহ ১১ উপজেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে ৪ লাখ টনের অধিক আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাংক্ষিত বৃষ্টি না হলেও আম উৎপাদনে তেমন কোন প্রভাব পড়বেনা বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানান। সংশ্লিষ্টরা বলছে, নওগাঁ জেলায় আমের বাগান বেড়েই চলেছে।আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে ছাড়িয়ে গেছে বরেন্দ্র অঞ্চলের এই জেলা।জেলার ৭০ ভাগ আমবাগান রয়েছে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায়।এ জেলায় উৎপাদিত আম্রপালি আমের সুস্বাদ নিয়ে সুনাম রয়েছে দেশ ও বিদেশে। জেলার ৬০ ভাগ আম্রপালি ২০ ভাগ বারি-৪,এবং কাটিমন, গোপালভোগ, নাক ফজলি, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, গুটি জাতের আম বাগান রয়েছে।প্রতি বছর এ জেলার সু-মিষ্টি আম রপ্তানি করা হচ্ছে ভারত, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
পোরশা উপজেলার আম চাষী মোজাফফর হোসেন জানান,তার ৩৩ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে।তার এ বাগানে অধিকাংশ রুপালি কিছু বারি-৪, কাটিমন এবং দেশী গুটিজাতের আম রয়েছে। তিনি জানান, এবছর আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। কাংক্ষিত বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপদাহে গাছ থেকে প্রায় ২০ ভাগ আম ঝড়ে পড়েছে। জেলার এ অঞ্চল বরেন্দ্রভূমি হওয়ায় বাগান গুলোতে প্রয়োজনীয় সেচের পানি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাপাহার উপজেলার আম চাষী সোহেল রানা বলেন, আমকে ঘিরে অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হয়ে উঠে জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলা। পত্নীতলার আম চাষি রবিউল ইসলাম জানান, প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপদাহের ফলে গাছ থেকে আম ঝড়ে পড়ায় এবছর ফলন বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আমের দাম ভালো পেলে ফলন বিপর্যয় পুষিয়ে নেয়া যাবে। অন্যথায় তার মতো বাগান মালিকদের এবছর লোকসান গুনতে হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। জেলার ১১ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে বাগান তৈরির পাশাপাশি আমের ফলন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে বাগান মালিকরা। এ কারণে নওগাঁ জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, খরার কারণে কিছু আম ঝড়ে পড়লেও তেমন সমস্যা নেই। ঝড়ে পড়ার পর যে আম থাকবে সেগুলোর মান ভালো থাকবে।খরার আগেই গাছে আম মটর দানায় পরিণত হয়েছে।তিনি আরও বলেন, এমন আবহাওয়ায় আমের গাছের গোড়ায় সব সময় পানি দিতে হবে। তা না পারলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।গত বছরের চেয়ে এবার ফলন বেশি হওয়ার আশা করছেন তিনি।