Sunday, April 20
Shadow

রাজ্যসভাতেও পাস ওয়াকফ বিল, যে আশঙ্কা করছে ভারতীয় মুসলিমরা

লোকসভার পর ভারতের রাজ্যসভাতেও পাস হয়েছে বিতর্কিত ওয়াকফ বিল। দীর্ঘ ১২ ঘন্টার বিতর্কের পর গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাস হয় বিলটি। এর পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি। আর বিপক্ষে ভোট দেয় ৯৫ জন সদস্য।

রাষ্ট্রপতি সই করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে রাজ্যসভার বিতর্ক। তবে শেষপর্যন্ত বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যসভার ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ বিল। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি।

বিপক্ষে ভোট দেন ৯৫ জন সংসদ সদস্য। ফলে বিলটি আইন হতে আর কোনো সমস্যা থাকল না। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলটিতে সই করলেই ৭০ বছরের পুরনো আইন বদলে নতুন আইন চালু হবে।
নতুন বিল বা ওয়াকফ সংশোধনী বিল বর্তমান ওয়াকফ বোর্ডের কাজকে অনকেটাই নিযন্ত্রিত করে দেবে।

উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালের এই বিলটির প্রথম সংশোধন হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। সে সময় ওয়াকফ বোর্ডের হাতে আরো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমান বিলে ঠিক তার উল্টো পথে চলা হয়েছে। ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা সংকুচিত করা হয়েছে অনেকটাই।

কীভাবে ভোট হলো?

এদিন রাজ্যসভাতেও ওয়াকফ বিল নিয়ে রীতিমতো নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিতর্ক চলে মধ্য রাত পর্যন্ত। রাত ২টা ১৯ মিনিটে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু বিলটি ভোটাভুটির জন্য পেশ করেন। ধ্বনি ভোটে বিলটি পাশও হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধীরা ধ্বনি ভোটের বিরোধিতা করেন। ফলে ডিভিশন ভোটের ব্যবস্থা করা হয়। সেই ভোটে ১২৮-৯৫ ভোটে পাশ হয়ে যায় ওয়াকফ বিল।

এদিন রাজ্যসভায় বিতর্ক শুরু করেন মন্ত্রী কিরণ রিজিজু। লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও সরকারের বক্তব্য পেশ করেন তিনি। জানান, ওয়াকফ সম্পত্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো তার মাধ্যমে মুসলিম সমাজের গরিব, অনাথ, শিশু এবং নারীদের উন্নয়ন। কিন্তু বর্তমান ওয়াকফ বোর্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই আইনে সংশোধন এনে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিরোধীদের বক্তব্য

অধিকাংশ বিরোধী দল এই বিলের বিপক্ষে কথা বলেছে। বলা হয়েছে, এই বিলের মাধ্যমে মেরুকরণের রাজনীতি করছে বিজেপি। শুধু তা-ই নয়, এই বিল যেভাবে পাশ করানো হয়েছে সেই কার্যপ্রণালী নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেশের একাধিক মুসলিম সংগঠন এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, সংসদের বাইরে এই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। তবে সরকারপক্ষ এদিন রাজ্যসভায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিল দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়াকে। দেবগৌড়া সংসদে বিলের সংশোধনীর পক্ষে বক্তৃতা করেন। যা সরকারপক্ষের বড় জয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তৃণমূলের ভিতরে বিতর্ক

লোকসভায় ভোটাভুটি হয়েছিল বুধবার রাতে। হুইপ থাকা সত্ত্বেও ওই দিন তৃণমূলের তিন সাংসদ পার্লামেন্টে অনুপস্থিত ছিলেন। যা নিয়ে দলের ভিতরেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওয়াকফ বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কে এবং ভোটাভুটিতে কেন সাংসদরা অনুপস্থিত থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই বিষয়ে আলোচনা হবে বলে দলের তরফে ডয়চে ভেলেকে জানানো হয়েছে।

অনুপস্থিত ছিলেন ঘাটালের সংসদ সদস্য দেব, বীরভূমের শতাব্দী রায় এবং কোচবিহারের জগদীশচন্দ্র বাসুনিয়া। দলের এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দেব ঝাড়খণ্ডে শুটিং করছেন বলে অনুপস্থিত ছিলেন। বাসুনিয়া জানিয়েছেন, পারিবারিক কাজে তিনি আটকে পড়েছিলেন। তবে তিন সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণার দাবি করেছে দলের বেশ কিছু নেতা। বিষয়টি এখন দলনেত্রীর কোর্টে।

ওয়াকফ বলতে ব্যক্তিগত স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বোঝায়, যা মুসলিমরা ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে দান করেন।সংশোধিত ওয়াকফ বিল অমুসলিমদেরও দানপত্র পরিচালনাকারী বোর্ডগুলোতে যুক্ত করবে এবং তাদের জমির মালিকানা বৈধকরণে সরকারকে আরো গুরুত্বপূর্ণ আইনসিদ্ধ ভূমিকা দেবে।

মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যুক্তি দিচ্ছে, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারকে লড়াই করতে সহায়তা করবে। কিন্তু মুসলিমরা আশঙ্কা করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির আওতাধীন ঐতিহাসিক মসজিদ, দোকান, মাজার, কবরস্থান এবং হাজার হাজার একর জমি বাজেয়াপ্ত, বিরোধ এবং ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ওয়াকফ বিলের সবচেয়ে বিতর্কিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হলো, এর মালিকানা বিধি। যা শত শত মসজিদ, মাজার এবং কবরস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই ধরনের অনেক সম্পত্তির আনুষ্ঠানিক নথিপত্র নেই। কয়েক দশক এমনকি শতাব্দী আগেও আইনি রেকর্ড ছাড়াই মুসলিমরা সেসব দান করেছিলেন। ফলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার মুসলিম সম্পত্তির ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ অর্জন করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে বাংলা, আলজাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *