Wednesday, July 30
Shadow

খাল দখলেই জলাবদ্ধ নড়াইল শহর

কার্ত্তিক দাস-নড়াইল: সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে যায় নড়াইল পৌরসভার অলিগলিতে। জলাবদ্ধতা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। এ পরিস্থিতির জন্য শহরের খাল দখল ও ভরাটকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযান শুরু করেছে পৌর প্রশাসন। ৩১ মে দুপুর থেকে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান।

নড়াইল পৌর ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় নড়াইল পৌর এলাকায় ছোট-বড় ১২টি খাল ছিল, যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। এর বেশির ভাগই দখল ও ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন মার্কেট ও স্থাপনা।

খাল ভরাট করে পৌরসভার নির্মিত মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে—চৌরাস্তার গাজী আলী করিম মার্কেট, মৌসুমি সুপার মার্কেট, শহীদ মিজান সড়ক মার্কেট, পুরোনো বাসটার্মিনালের সাবেক জিয়া প্লাজা, সদর হাসপাতাল মার্কেট, রূপগঞ্জ এলাকার উত্তরা ব্যাংক মার্কেট, পৌর সুপার মার্কেট-১ ও ২, এবং টিঅ্যান্ডটি অফিসসংলগ্ন মার্কেট।

এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন উল্লেখযোগ্য মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে—মোল্লা মার্কেট, তারিক স্কয়ার, ডিসির বাংলোর সামনের মার্কেট, চৌধুরী মার্কেট, স্টেডিয়াম মার্কেট, ফাতেমা সুপার মার্কেট, সিকদার মার্কেট, ইসলাম মার্কেট, নওশের আলী মার্কেট, সিঙ্গার মার্কেট, জমাদ্দার টাওয়ার, রবি কুন্ডু মার্কেট এবং অসীত নন্দী মার্কেট। রূপগঞ্জ সিকদার মার্কেটের সামনেও জেলা পরিষদ দুটি মার্কেট নির্মাণ করেছে। এসব স্থাপনাও খাল ভরাট করেই তৈরি।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা ছামি মোল্লা, ব্যবসায়ী সেলিম শেখসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের প্রধান খালটি ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে আইনজীবী সমিতি, ডিসি বাংলো, পৌরসভা এবং সরকারি বালক বিদ্যালয়ের পুকুর পেরিয়ে ঈদগাহের পেছন দিয়ে বিলে গিয়ে মিশত। কিন্তু এখন সেই খালের কোনো অস্তিত্ব নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌরাস্তার প্রধান খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে পৌর ভবনসহ অন্তত ১০টি মার্কেট এবং জেলা পরিষদের চারটি মার্কেট। ব্যক্তি মালিকানায় খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আরও প্রায় ২০টি মার্কেট। এতে প্রায় চার হাজার ব্যবসায়ী বর্তমানে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

রূপগঞ্জ জামে মসজিদের সামনের খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে চারটি পৌর সুপার মার্কেট এবং আরও দুটি বেসরকারি মার্কেট। এ ছাড়া মুচিপোল, রামকৃষ্ণ আশ্রম, রাইফেল ক্লাব, সাবেক গোহাটখোলা হয়ে বাসভিটা খালের ধার ঘেঁষে তৈরি হয়েছে একাধিক স্থাপনা।

সদর হাসপাতালের সামনে দিয়ে একসময় যে খালটি দূর্গাপুর বিলে গিয়ে মিশত, সেখানে এখন গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচটি ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেট, একটি মসজিদ এবং একটি ওলামা লীগের নেতার চেম্বার।

এ প্রসঙ্গে ভোয়াখালি এলাকার বাসিন্দা অধ্যাপক প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য বলেন, “রক্ষকরাই যদি ভক্ষকের ভূমিকা নেয়, তাহলে সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়বেই।”

তিনি জানান, কালভার্ট বন্ধ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রেস্ট হাউস নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০০টি পরিবার এখন জলাবদ্ধতার শিকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক নারী বলেন, “অনেক বছর আগে যখন এ এলাকায় বউ হয়ে এসেছি, তখন উঠানে রোদ পড়ত, বৃষ্টি হলেও পানি জমত না। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে হাঁটু পানি ওঠে।”

জেলা প্রশাসক বলেন, “পৌর এলাকায় যেসব নর্দমা ও খাল ছিল, সেগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পৌর এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে।তিনি আরও বলেন, “নড়াইল একটি পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে উঠবে—এ ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *