
ওমর ফারুক আশরাফি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কুলিকুন্টা গ্রামটি শান্ত-নিবিড় প্রকৃতির এক অপূর্ব কোণে অবস্থিত। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে আছে প্রাচীন এক আমবাগান, আর সেই বাগানের পেছনে ছায়া ঢাকা একটি পুকুর। পুকুরটি ঘিরে ছড়িয়ে আছে বহু রহস্যময় গল্প ও লোককথা। সে পুকুরের পাশে দাঁড়ালে আজও যেন বাতাসে ভেসে আসে এক অতীতের গন্ধ, এক অদ্ভুত শিহরণ।
পুকুরটির পাশেই রয়েছে ভূঁইয়া বাড়ি—একসময়ে যার নাম উচ্চারণেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়তো সম্মান আর গৌরব। বড়, প্রাচীন, দোতলা সেই বাড়িটি ছিল ধন-সম্পদ, আতিথেয়তা ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। নানুর মুখে শুনেছি, সেই বাড়িতে যখনই কোনো বিয়ের আয়োজন হতো, পুকুর থেকে স্বর্ণের থালা-বাটি ভেসে উঠতো। কেউ জানতো না ওগুলো কোথা থেকে আসে, কারা রেখে যায়, তবে সবাই জানতো—এটা ছিল এক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ।
ভূঁইয়া বাড়ির বড় ছেলে ছিলেন আভু ভূঁইয়া। সৌম্য চেহারা, দৃঢ়চেতা মন ও দরদভরা হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন তিনি। আভু ভূঁইয়া শুধু নিজের পরিবার নয়, ছিলেন পুরো গ্রামের অভিভাবকস্বরূপ। গরিবদের বিয়েতে তিনি সাহায্য করতেন, ছাত্রদের পড়ালেখার খরচ দিতেন, এমনকি অনেক পরিবারকে জমি দিয়ে বসতি গড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
একবার বর্ষাকালে, পুকুরটি কানায় কানায় পূর্ণ। সে সময় আভু ভূঁইয়ার ছোট ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। ঠিক সেই রাতে পুকুরের ওপর ঘন কুয়াশার মধ্যে দেখা যায় এক আবছা আলো। পরদিন সকালে পুকুরঘাটে পাওয়া যায় একটি স্বর্ণের থালা, তাতে সাজানো গাঁদা ফুল আর একটি চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, “আশীর্বাদ থাকুক তোমাদের বংশে চিরকাল।”
সেই ঘটনা ভূঁইয়া বাড়িকে ঘিরে রহস্যের আবরণকে আরও ঘন করে তোলে। মানুষ বিশ্বাস করতো, ওটা ছিল পূর্বপুরুষদের পক্ষ থেকে এক অলৌকিক বার্তা, এক ঐশী আশীর্বাদ।
নামঃওমর ফারুক আশরাফি।
গ্রামঃসাতারকুল।
থানাঃবাড্ডা উত্তর।
জেলাঃঢাকা।