
যুক্তরাজ্যে এক নতুন ও যুগান্তকারী আইভিএফ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আটটি সুস্থ শিশুর জন্ম হয়েছে, যা তিনজন ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগে আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
বুধবার (১০ জুলাই) নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাজ্য) ও মোনাশ ইউনিভার্সিটি (অস্ট্রেলিয়া) যৌথভাবে এ গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করেছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন।
মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ হলো এমন একটি জেনেটিক (বংশগত) সমস্যা, যা প্রতি ৫,০০০ শিশুর মধ্যে একজন শিশুকে আক্রান্ত করে। এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে দৃষ্টি হারানো, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি জটিল উপসর্গ দেখা দেয়।
২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে অনুমোদিত এই পদ্ধতিতে— মায়ের ডিম্বাণু থেকে ডিএনএ, বাবার শুক্রাণু থেকে ডিএনএ এবং একটি সুস্থ ডোনার নারীর ডিম্বাণু থেকে সামান্য পরিমাণে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ নেয়া হয়।
এই প্রক্রিয়ায় শিশুর মোট ডিএনএর মাত্র ০.১ শতাংশ আসে ডোনার বা তৃতীয় ব্যক্তি থেকে। তাই একে সাধারণভাবে “তিন অভিভাবকের সন্তান” বলা হলেও, ডোনারের অবদান খুব সামান্য।
নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে এই পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয় ২২ জন নারীকে। তাদের মধ্যে ৮ জন সুস্থ শিশু জন্ম দিয়েছেন—চার ছেলে ও চার মেয়ে। শিশুদের বয়স এখন ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে।
এদের মধ্যে ৬টি শিশুর ক্ষেত্রে ৯৫% থেকে ১০০% পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ দূর করা গেছে। বাকি ২টি শিশুর ক্ষেত্রে ৭৭% থেকে ৮৮% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে, যা রোগ সৃষ্টি করার মাত্রার নিচে নেমে গেছে।
বর্তমানে সব শিশুই সুস্থ আছে, তবে ভবিষ্যতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা হবে বলে হাসপাতাল থেকে জানান হয়েছে।
যদিও পদ্ধতিটি যুক্তরাজ্যে অনুমোদিত, তবে এখনো যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ অনেক দেশেই এটি অনুমোদিত নয়।
সমালোচকদের মতে, এই চিকিৎসায় মানব ভ্রূণ ধ্বংসের আশঙ্কা আছে এবং এটি ভবিষ্যতে “ডিজাইনার বেবি” তৈরি করার পথ খুলে দিতে পারে—যেখানে পছন্দ অনুযায়ী শিশুর জিন পরিবর্তন করা সম্ভব হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা ভয়াবহ মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের শিকার, তাদের জন্য এই পদ্ধতি জীবন বদলে দেওয়া এক সুযোগ—এটা শুধু বিজ্ঞানের অগ্রগতি নয়, মানবতার কল্যাণও।