Sunday, June 15
Shadow

আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা: দেশজুড়ে সতর্কতা জারি   

প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও নতুন করে বাড়ছে শঙ্কা। কোথাও আর নেই স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা, কমে গেছে মাস্ক পরার প্রবণতা। এমনকি করোনার রোগী কমে যাওয়ায় বহু হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে পরীক্ষার কিট। একইভাবে টিকা নেওয়ার আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না।

এমন এক পরিস্থিতিতে গত মাস থেকে আবারও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রনের দুটি উপধরনের মাধ্যমে ভাইরাসটি নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের স্থল ও আকাশপথসহ সব প্রবেশপথে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রোগতত্ত্ববিদদের আশঙ্কা, সংক্রমণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসের শেষদিকেই করোনা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সামনে ঈদুল আজহা, ফলে ঢাকামুখী-ঢাকাছাড়া বিপুল পরিমাণ মানুষের চলাচল সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এজন্য করোনা পরীক্ষা বাড়ানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্কদের টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে করোনা পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। এপ্রিলে যেখানে মাসজুড়ে আক্রান্ত ছিলেন ৫০ জনের কম, মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। আর জুনের প্রথম দশ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন।

পরীক্ষা বাড়ালে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জন।

তবে মৃত্যুহার বর্তমানে অনেক কম। সর্বশেষ ৫ জুন করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে দেশে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৯ হাজার ৫০০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শনাক্ত রোগীদের প্রায় সবাই অমিক্রনের উপধরন এক্সএফজি ও এক্সএফসি-তে আক্রান্ত। এই দুটি উপধরনই ওমিক্রনের জেএন-১ ধরনের শক্তিশালী রূপ।

এদিকে ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ধরন এনবি ১.৮.১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গত ২৩ মে জানিয়েছে, উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ধরনটির বিস্তার অব্যাহত রয়েছে। ১৮ মে পর্যন্ত ২২টি দেশে এই ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, মোট ৬১৮ জন রোগীর দেহে শনাক্ত হয়েছে এ ধরন।

এই অবস্থায় ভারতসহ সংক্রমণপ্রবণ দেশগুলোতে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। অনুরোধ করা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করতে।

করোনার নতুন উপধরনের আন্তর্জাতিক ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশের স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের সব প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার ও হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক, গ্লাভস ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE) মজুত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে করোনা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রচার চালাতে হবে।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “কয়েক বছর ধরে করোনা নিম্নমুখী থাকায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে, তাই নতুন করে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,” বলেন ডা. হালিমুর রশিদ।

তিনি জানান, “অনেক হাসপাতালে টেস্ট না হওয়ায় কিটগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এখন নতুন করে পর্যাপ্ত পরিমাণ কিট সংগ্রহ করতে হবে।”

করোনার পরিস্থিতি উন্নতির পর মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। বর্তমানে যারা টিকা নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই বিদেশগামী যাত্রী। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৬০ জন টিকা নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভবতী, বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের আবারও টিকা দিতে হবে। সরকারও এই বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে।

সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (EPI) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের হাতে বর্তমানে ৩১ লাখ ডোজ ফাইজারের টিকা মজুত রয়েছে, যার বেশির ভাগের মেয়াদ আগামী আগস্টে শেষ হয়ে যাবে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “অমিক্রনের এই নতুন উপধরন দ্রুত ছড়ালেও এটি এখনও মৃত্যু ঘটানোর মতো ততটা শক্তিশালী নয়। তবে সংক্রমণ যত কমানো যায়, ততই ভালো। কারণ ভাইরাস যত ছড়ায়, ততই এটি প্রাণঘাতী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে।”

তিনি আরও বলেন, “টিকার কার্যকারিতা সাধারণত ছয় মাসের বেশি থাকে না। তাই বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও ঝুঁকিপূর্ণদের টিকা দেওয়া এখন সবচেয়ে জরুরি। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।”

সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি আবারও নজরদারির দাবি করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসচেতনতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখা এখন সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *