Wednesday, June 11
Shadow

সাবেক এমপি আনারের প্রাডো গাড়ি কুষ্টিয়ার বহুতল ভবনের পার্কিং এ

কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং জোন থেকে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাড়িটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য (এমপি) ও সিআইপি স্টিকার। কালো রঙের এই গাড়িটির নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, এটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যবহৃত গাড়ি।

জানা গেছে, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। শহরের ৮ তলা বিশিষ্ট ‘সাফিনা টাওয়ার’ নামের ভবনের গ্যারেজে গাড়িটি পাওয়া যায়, যা কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনেই অবস্থিত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন জানান, গাড়ির ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সংসদ সদস্যের স্টিকার এবং সিআইপি স্টিকার পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, গাড়িটি সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারেরই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং গাড়িটি থানায় নেওয়া হবে।

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি’ নামে একটি সিগারেট কোম্পানি ভবনের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়েছে। তারাই গাড়িটি গ্যারেজে রাখার ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, কয়েক মাস ধরে এই গাড়িটি ভবনের পার্কিংয়ে রাখা আছে। তারা দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেন বলেন, “জেনুইন লিফ কোম্পানি ভবনের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়েছে। সেখানে বিদেশিরা আসেন, থাকেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। তারাই এই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছেন। কোম্পানির জিএম হচ্ছেন বেলাল স্যার এবং সিইও জাহিদ স্যার। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।”

গাড়িচালক শান্ত বলেন, “আজ থেকে ৫ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালাতাম, তবে এখন আর চালাই না। বর্তমানে আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে কাজ করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। তাদের হুকুমে আমি গাড়ি স্টার্ট দিই। গাড়ির মালিক কে, তা আমি জানি না। বেলাল স্যার ও জাহিদ স্যারই সব জানেন। আমি এই গাড়িটি কখনো চালাইনি। গাড়ি থেকে পুলিশ যে কাগজপত্র, লাইসেন্স ও স্টিকার পেয়েছে, সেখানে গাড়ির মালিকের নাম লেখা আছে। আমি কিছুই জানি না।”

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাফিনা টাওয়ারের মালিক, জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ এবং জিএম বেলালের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা কাগজে আনোয়ারুল আজীম আনারের নামই উল্লেখ আছে। ভবনের ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্র অনুযায়ী, মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মো. মুস্তাফিজুর রহমান ভবনের তিনটি ইউনিট ও তিনটি গাড়ির পার্কিং স্পেস ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভাড়া নিয়েছেন। গাড়িটি বর্তমানে মুস্তাফিজুর রহমানের বরাদ্দকৃত পার্কিং স্পেসেই রাখা আছে। জানা গেছে, তিনি কুষ্টিয়ার দশ মাইল এলাকায় অবস্থিত ‘তারা টোবাকো’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার।

বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *