
আশরাফ গোলাপ কেন্দুয়া (নেত্রকোনা): নেত্রকোনা জেলার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমাজে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালের দিকে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফরিদা আক্তার একই বিদ্যালয়ের চারজন সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে হুমকি, মানহানিকর মন্তব্য এবং অশোভন আচরণের অভিযোগে কেন্দুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদা আক্তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই শিক্ষক সমাজে বিভক্তি শুরু হয়। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় কিছু জুনিয়র শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন। ফরিদা আক্তারের আগমনের পর সেই দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়।
ফরিদা আক্তার বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে সক্রিয়। তারা অতীতে স্কুলের কিছু কার্যক্রমের বিনিময়ে সম্মানী পেয়ে এসেছেন বলে দাবি করেন। সরকারি নিয়ম বা কোনো রেজুলেশন না থাকায় আমি সম্মানী প্রদানে রাজি হইনি। ফলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমার অফিস কক্ষে এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন এবং আমাকে মারধরের হুমকি দেন। আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় অভিযোগ করেছি।
অভিযোগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেন। তারা উল্টো ফরিদা আক্তারের স্বেচ্ছাচারী, অসহযোগী এবং উগ্র আচরণের নিন্দা জানান।
একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন এমন অবস্থা যে, বোবার মতো চুপ থাকলেই ভালো। কেউ কিছু বললেই সেটি অভিযোগে পরিণত হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির চৌধুরী বলেন, ফরিদা ম্যাডাম আমার নির্দেশনা অনুসরণ করেন না। কেউ কিছু বললেই তিনি ছাত্রদের ফোন দিয়ে ডেকে আনেন। যা শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ফলাফল প্রস্তুতের বিনিময়ে সম্মানী দেওয়ার রেওয়াজ আগে থেকেই ছিল। যদিও তা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নয়। আমি সম্মানী দিতে বললেও তিনি রাজি হননি। যেটি থেকেই মূলত বিবাদ সৃষ্টি হয়। তবে বিষয়টি থানায় যাওয়ার মতো গুরুতর ছিল না বলে মনে করি।
পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমিত করতে আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী কক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দুয়া থানার এসআই কামাল হোসেন, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ।
আলোচনায় অভিযুক্ত শিক্ষকগণ দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। ফরিদা আক্তারও বিষয়টির মীমাংসায় সম্মত হন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কেন্দ্র। সেখানে শিক্ষক সমাজের মধ্যে অশান্তি দুঃখজনক। তবে সম্মানজনক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে। এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।