Friday, May 30
Shadow

শেরপুরে নিম্নমানের কাজ করায় হাতের টানেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং

আনিছ আহমেদ (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ

শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোবারকপুর রাস্তা সংস্কার কাজে উঠেছে এমন অনিয়মের অভিযোগ। শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোবারকপুর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭০০ মিটার সড়কের মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়া সড়কের ওই অংশের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় হাতের টানেই উঠে আসছে কার্পেটিং। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অধিনে ২ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ১১৩ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোবারকপুর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭শ মিটার সড়কের সংস্কার কাজটি পান মেসার্স এম এম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গেল এপ্রিলের ৩০ তারিখে কাজটি সম্পন্ন করার কথা থাকলেও কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে এখনও পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম এন্টারপ্রাইজ। ইতিমধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার সংস্কার কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদার। তবে সংস্কার হওয়া সড়কে হাতের টানেই উঠে আসছে কার্পেটিং। প্রায় ৪০ টি স্থানে এভাবে হাতের টানে উঠে এসেছে সড়কের কার্পেটিং। পরে তরিঘড়ি করে কার্পেটিং উঠে আসা অংশ মেরামত করছেন ঠিকাদারের লোকজন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মানহীন ও নিম্ননমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সড়কের এমন বেহাল অবস্থা। শুধু তাই নয়, গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি চলাকালীন সময় সড়কের জমে থাকা বৃষ্টির পানি অপসারণ করেই চলেছে পিচ ঢালাই এর কাজ। এমন অভিযোগও করছেন স্থানীয়রা। নিম্নমানের সংস্কার কাজের ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই এই সড়কটি ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা তাদের।

এদিকে, সড়ক সংস্কারের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে এমন অভিযোগ করায় স্থানীয়দের নামে শেরপুর সদর থানায় চাঁদাবাজীর মামলা দায়ের করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। মামলার ভয়ে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই এলাকার অনেকেই।

যুগিনীমোড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৭-৮ দিন আগে রাস্তাটি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু মেরামতের কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও হাতের টানেই রাস্তার পিচ কার্পেটিং উঠে আসছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা ভেঙে গিয়ে আবার আগের মতই হয়ে যাবে। তাহলে, সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই রাস্তা মেরামত কাজ করে আমাদের মত সাধারণ মানুষের তো কোনো উপকার হলো না। শুধু শুধু সরকারের টাকা গচ্চা গেলো।

ওই এলাকার এক নারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বৃষ্টির মাঝেই রাস্তার কাজ করা হয়েছে। চটের বস্তা দিয়ে রাস্তার পানি মুছে তারপর পিচ ঢালাই করা হয়েছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষ, আমরাই জানি বৃষ্টির মধ্যে পিচ ঢালাই করলে সেটা থাকে না। পানিতে পিচ ঢালাই করলে সেটা যে থাকবে না, এটা কি কন্ট্রাক্টর আর ইঞ্জিনিয়াররা জানে না!

শহীদ মিয়া বলেন, রাস্তায় কাজের সময় পিচ ঠিকমত দেয়নি। কোনো রকম করে হালকাভাবে পিচ দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে । তাই এই কার্পেটিং শক্ত হয়নি। হাতের ইশারাতেই এই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এবিষয়টি আমরা প্রতিবাদ করেছি, তাই আমাদের অনেকের নামে চাঁদাবাজীর মামলা দিয়েছেন ঠিকাদার।

এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবাইদুল আলম বলেন, যুগিনীমোড়া সড়ক সংস্কার কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন ঠিকাদার, এমন একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেরপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানার পর সড়কটি আমি পরিদর্শন করি। সেখানে দেখা গেছে প্রায় ৩৫-৪০ টি স্পটে সড়কের কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। আপাতঃ দৃষ্টিতে যা দেখেছি তাতে কাজের গুণগতমান ভালো। তারপরও আমরা আমাদের ল্যাবে মালামাল নিয়ে এসেছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফলের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে তিনি আরও বলেন, এটাতো আরসিসি কাজ না যে, বন্ডিং হবে। এটাও বন্ডিং হবে তবে সময় দিতে হবে। শুনেছি ঠিকাদার মামলা করেছে। আমি মনে করি আইনের আশ্রয় নেয়াই উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *