Tuesday, April 1
Shadow

দেশে ছিনতাই-অপহরণ বেড়েছে, কমেছে ধর্ষণ-চুরি

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সামগ্রিক অপরাধের হার ৬.১৬ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা ও অপহরণের মতো সহিংস অপরাধের পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চুরি, সিঁধেল চুরি ও ধর্ষণের মতো অপরাধ কিছুটা কমেছে।

সাত মাসে অপরাধের চিত্র

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ১৩ হাজার ৪৯৬টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭১৪টি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাকাতি, দস্যুতা ও অপহরণ।

  • ডাকাতি বেড়েছে ১৩৪%: এই সময়ে ৪২৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আগের বছর ছিল ১৮২টি।
  • দস্যুতা বেড়েছে ৪১%: গত সাত মাসে ১,০৩৮টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে, আগের বছর ছিল ৭৩৫টি।
  • অপহরণ বেড়েছে ৮৬%: এবছর সাত মাসে ৫৪৮টি অপহরণের ঘটনা ঘটে, আগের বছর ছিল ২৯৪টি।

দ্রুত বিচার আইনে মামলার চিত্র

ছিনতাইয়ের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলার সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। ২০২০-২১ সালে ছিল ৩০৬টি মামলা, যা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮১টিতে। আইজিপি বাহারুল আলম জানান, পুলিশের প্রতি অনাস্থা এবং আইন না মানার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। এজন্য পুলিশকে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খুনের ঘটনা বৃদ্ধি

খুনের মামলার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাত মাসে ২,৮৪০টি খুনের মামলা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১,৬৮০টি— বেড়েছে ৬৯%। তবে পুলিশের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রায় ৯৮৬টি খুনের মামলা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর করা হয়েছে। সেগুলো বাদ দিলে খুনের হার ১০% বেড়েছে।

যেসব অপরাধ কমেছে

ধর্ষণ, চুরি ও সিঁধেল চুরির মতো অপরাধ কমেছে।

  • ধর্ষণের ঘটনা ৯.৮% কমেছে (২,৭২৫ থেকে ২,৪৫৬টি)।
  • চুরি কমেছে ১৪% (৫,৫২২ থেকে ৪,৭৩৪টি)।
  • সিঁধেল চুরি কমেছে ৬.৫%।

অপরাধ প্রবণতার কারণ

সরকার ও পুলিশের বৈঠক এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে:

  1. গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার শূন্যতা।
  2. পুলিশ বাহিনীর মনোবলের ঘাটতি।
  3. আইনের প্রতি মানুষের সাময়িক অনাস্থা ও অপরাধীদের সুযোগ গ্রহণ।
  4. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দখল-চাঁদাবাজি ও সহিংসতার প্রসার।
  5. পুরনো অপরাধের মামলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও নেতিবাচক প্রচারণা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু পরিসংখ্যান নয়— মানুষের নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাই এখন জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘‘পরিসংখ্যানের বাইরেও মানুষ কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীরা যাতে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য মামলা থেকে শুরু করে তদন্ত পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *