Saturday, July 5
Shadow

পিআরের বিরোধিতা করতে গিয়ে জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করেছেন

-শেখ ফজলুল করীম মারুফ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ আজ ৫ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের সকল মানুষের মতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোন বিকল্প নাই।  জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে করার দাবী করেছে।

এই দাবী নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ মতামত থাকাই রাজনৈতিক সৌন্দর্য। আলোচনা, তর্ক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে দেশের স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এটাই নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা।

কিন্তু আজকে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ যে ভাষায় পিআর দাবীকে সামনে নিয়ে আসা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক বলেন, তিনি যে যুক্তিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমালোচনা করেছেন তা স্ববিরোধী। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে বিএনপিও ২০২২ এর আগের সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

২০১৩-১৪ সালে তারা গাজীপুর, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ইত্যাদি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ীও হয়েছে। ২০১৯ সালেও তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

চট্রগ্রামে জনাব শাহাদাত হোসেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলের নির্বাচনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জনাব ইশরাক আওয়ামী আমলের নির্বাচনে  অংশ নিয়েছেন এবং তারই ভিত্তিতে মেয়রের পদ দাবী করে আন্দোলন করেছেন।

জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো একজন সিনিয়র নেতা এমন স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক অভব্যতা করবেন বলে জাতী আশা করে না।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক বলেন, জনাব ইলিয়াস আলীর মতো বিএনপি নেতারা গুম হয়ে শাহাদাৎ বরণ করলেও জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘গুম’ হয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ভারতে আরাম-আয়েশে অবস্থান করার কারণে অনেক কিছুই হয়তো তিনি জানেন না বা জানলেও অন্যকারো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মিথ্যা ও স্ববিরোধতার আশ্রয় নিচ্ছেন। বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলবো, জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন না। ফলে তার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে কেউ যেনো তাকে ব্যবহার করতে না পারে।

শেখ ফজলুল মারুফ বলেন, জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাতেও একই রকম বক্তব্য রাখলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের প্রতিবাদের মুখে তার বক্তব্য ইউথ ড্র করেছিলেন এবং সরি বলেছিলেন। তারপরেও একই ধরণের বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক। তিনি কি নতুন বাংলাদেশের সুস্থ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে কারো স্বার্থে বিনষ্ট করতে চাইছেন?

দলের প্রচার সম্পাদক বলেন, জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি নোংরা করার দায় তাকে ও বিএনপির বহন করতে হবে। ১১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত তারা আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের অধিনের সংসদ সদস্য থেকেছেন। সংসদের বেতন-ভাতা নিয়েছেন।

জনাব সালাহুদ্দিন আহমেদ সাহেব সম্পর্কে ভারত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ জোড়ালো। ইলিয়াস আলীর মতো নেতারা যখন গুম হওয়ার পরে শাহাদাৎ বরণ করেন সেখানে এই সালাউদ্দিন সাহেব গুম হওয়ার পরে ভারতে রাজকীয় হালতে জীবন যাপন করতেন।

বিএনপির নেতৃবৃন্দ যখন দেশে জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন তখনও তিনি ভারতে দিব্যি আরাম-আয়েশে দিন কাটিয়েছেন। তিনি ভারত থেকে আসার পরে গুম নিয়ে গুম কমিশনে কোন মামলাও করেন নাই। শেষে চাপে পড়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ফলে তার “র” সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা জোড়ালো।

এখন যখন এই ভদ্রলোক ফ্যাসিস্ট আমলে নির্বাচনের বৈধতা দেয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে দায়ী করেন তখন এতোসব তথ্য ভুলে যান কি করে? নাকি আওয়ামী লীগের মতো একইভাবে “র” দ্বারা মিথ্যা বলার প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন বলে মিথ্যা বলতে চোখ কাঁপে না।

একই ধরণের বক্তব্য দেয়ার কারণে ঐকমত্য কমিশনের সভায় তিনি বক্তব্য উইথড্রো করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম তার লজ্জা হয়েছে। এখন দেখি তিনিও লীগের মতো বেশরম। দিল্লি কা লাড্ডুর প্রতিক্রিয়া সবার মধ্যে একই ভাবে কাজ করে মনে হচ্ছে।

তাকে শিক্ষিত ও মার্জিত মনে করা হতো। কিন্তু “র” এর তালিম তাকে অমার্জিত ও গোঁয়ার করে তুলেছে। না হয় “চরের” দল বলার মতো ধৃষ্ঠতা তার হওয়ার কথা না। একটা রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করার যে শিষ্টাচার তা “র” এর  প্ররোচনার প্রভাবে তিনি ভুলে গেছেন।

সালাহুদ্দিন ভাই, আপনি যে পুরোনো অসভ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করেন তা এখন চলে না। সভ্য রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মতের ভিন্নতার জবাব হয় যুক্তি দিয়ে। কিন্তু আপনি অভব্যতা করেছেন  সেভাবে ক্ষমা চেয়ে নিন। অন্যথায় নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপনি পরিত্যাজ্য হয়ে পড়বেন। এবং আপনার কারণে বিএনপির মতো একটা দলও সমালোচনার মুখে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *