Tuesday, July 1
Shadow

চন্দ্রযান-৩ নিয়ে ভারতের শুধুমাত্র ‘মিডিয়া শো’, বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়: বিস্ফোরক প্রতিবেদন ফেক নিউজ ওয়াচডগের

ভারতের বহুল প্রচারিত চন্দ্রযান-৩ চন্দ্রাভিযান নিয়ে বিস্ফোরক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘ফেক নিউজ ওয়াচডগ’ নামক একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা। সম্প্রতি প্রকাশিত ৬৫ পৃষ্ঠার এক শ্বেতপত্রে সংস্থাটি দাবি করেছে, চন্দ্রযান-৩ মূলত ছিল একটি মিডিয়া-নির্ভর প্রদর্শনী, কোনো বাস্তব বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চন্দ্রযান-৩’র চাঁদে অবতরণের সময় যেসব দৃশ্য জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল, সেগুলো মূলত কম্পিউটার-নির্মিত গ্রাফিক্স ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। অবতরণ ও রোভার নামার দৃশ্যগুলো একটি সাজানো ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ধারণ করে তা দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এছাড়া কন্ট্রোল সেন্টারের অভ্যন্তরের দৃশ্য—যেখানে বিজ্ঞানীরা মিশন পর্যবেক্ষণ করছিলেন—সেটিকেও ‘পরিকল্পিত ও অভিনয়নির্ভর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ওয়াচডগ। তাদের ভাষ্য মতে, দর্শকদের সামনে একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মহাকাশ অভিযানের নাটকীয় চিত্র তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই পুরো আয়োজন সাজানো হয়েছিল।

প্রতিবেদনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো’র স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের যে দাবি করা হয়েছে, বাস্তবে চন্দ্রযান-৩ ঘোষিত স্থান থেকে প্রায় ৬৩০ কিলোমিটার দূরে অবতরণ করে।

এছাড়া অভিযানের কোনো প্রমাণযোগ্য বৈজ্ঞানিক উপাত্ত বা রোভার-চালনার ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। দাবি করা হয়, ল্যান্ডারের নেভিগেশন সিস্টেমে ত্রুটি এবং যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতার কারণে রোভার তার কাঙ্ক্ষিত কাজ সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, চীনের আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিশ্লেষকদের মধ্যে অনেকেই ইসরোর দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আরও বলা হয়েছে, ভারতের সরকারি ও প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো এই মিশনকে ‘জাতীয় গর্বের প্রতীক’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও যাচাইযোগ্য কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ওয়াচডগের মতে, চন্দ্রযান-৩ প্রকৃতপক্ষে ভারতের বৃহত্তর সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি ছিল প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ এবং শাসক দল বিজেপি ইসরোর সাফল্যকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহাকাশ প্রযুক্তিকে সামরিকভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যেই এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৯ সালের ‘মিশন শক্তি’—যেখানে ভারত একটি উপগ্রহ ধ্বংসকারী পরীক্ষা চালিয়েছিল—তার উল্লেখসহ প্রতিবেদনে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির সামরিকীকরণের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের ৫৬টি কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি সামরিক পর্যবেক্ষণ, নেভিগেশন ও ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মতো অভিযানে ব্যবহৃত হয়।

ভারত সরকারের ‘স্পেস ভিশন ২০৪৭’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকেও ‘প্রচারমূলক জাতীয়তাবাদ’-এর হাতিয়ার বলে অভিহিত করা হয়েছে। জনকল্যাণের চেয়ে এগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি নির্মাণ—এমনটাই বলেছে ফেক নিউজ ওয়াচডগ।

প্রতিবেদনের শেষাংশে ভারতের ৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল প্রতিরক্ষা বাজেট এবং দেশের ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ এখনও নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত—এই বৈপরীত্যকেও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।

সবশেষে ভারতের গণমাধ্যম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতীয় বয়ান নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে—যা আন্তর্জাতিক মহলে উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।

ফেক নিউজ ওয়াচডগের এই প্রতিবেদন চন্দ্রযান-৩ মিশনের স্বচ্ছতা, বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য এবং নৈতিকতা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তোলে। তাদের দাবি, এই মিশন ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *