Friday, June 6
Shadow

জবিতে পদোন্নতি ঘিরে অনিয়ম ও গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ, আদালত অবমাননার শঙ্কা

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় একের পর এক অনিয়ম, পক্ষপাত ও গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেখানে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করেছে, সেখানে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন শিক্ষককে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন দর্শন বিভাগের মো. জসিম খান, ড. মর্জিনা খাতুন ও মো. আবদুস সালাম। এতে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, পাশাপাশি আদালত অবমাননার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ড. সোচনা শোভা, দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, পদোন্নতির সকল যোগ্যতা পূরণ করলেও ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনী বোর্ডে অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে ডাকেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে তিনি হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (১২৫০/২০২৪) দায়ের করলে, আদালত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে তাঁকে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্দেশ দেন।

তবে, আদালতের এই নির্দেশনা মান্য না করে, বিশ্ববিদ্যালয় চেম্বার জজ আদালতে আবেদন (৪৯১/২০২৪) করে আদেশটি ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে দাবি করে, ড. সোচনা শোভার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকায় তাঁকে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করানো সম্ভব নয়। আদালতও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থানকে সমর্থন করে রায় দেন।

পরবর্তীতে ড. সোচনা শোভা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর ১৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে “Disposed of stay continue” আদেশ দেন। কিন্তু এই শুনানির আগে, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ড. মো. জসীম খান ও ড. মর্জিনা খাতুনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়।

বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার পর, তারা তদন্তের নির্দেশনা দেয়। পরবর্তীতে, ৩ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অধ্যাপক এ কে এম মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় প্রথম তদন্ত কমিটি। পরে শাস্তি নির্ধারণে দ্বিতীয় কমিটি গঠিত হয় যার আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক রইস উদ্দিন। তিনি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত তিন শিক্ষক আবার নতুন করে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন। অথচ, ৩১ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সাক্ষাৎকারে ড. সোচনা শোভাকে বাদ দিয়ে অন্য পাঁচজন প্রার্থীকে ডাকা হয়, যাদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে এখনও বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে ড. সোচনা শোভার বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকার কথা বলে তাঁকে বঞ্চিত করেছে, অন্যদিকে একই অবস্থা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। এতে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ড. সোচনা শোভা।

ড. সোচনা শোভা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করে পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এবং গবেষণা জালিয়াতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ড. মো. জসীম খান মাত্র একটি প্রবন্ধ দেখিয়ে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, যার ৯৩ শতাংশ কপি করা। মর্জিনা খাতুনের ৭৭ শতাংশ প্রবন্ধ নকল বা চুরিকৃত। একইভাবে, ড. মো. আবদুস সালাম ৩০ শতাংশ নকল এবং অপর একজনের লেখা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষক মো. জসিম খান বলেন, বিষয়টি প্রশাসনই ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে। আমাদের বর্তমান উপাচার্য মহোদয় নীতিবিরোধী কোনো কাজ করেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভিত্তিহীন অভিযোগের উপর নির্ভর করে আমার যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা অপূরণীয়। এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক অধ্যাপক। তিনি ও তার স্ত্রী এক সময় এখানে কর্মরত ছিলেন, যদিও তার স্ত্রী পরবর্তীতে বিদেশে চলে গেছেন। সেই অধ্যাপকের সাথে প্রশাসনের পূর্ব থেকেই কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু আমরা কেন তার সেই ব্যক্তিগত বিরোধের বলি হলাম, তা সত্যিই বোধগম্য নয়।

অন্য অভিযুক্তদের সাথে বার বার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হইনি। ড. মর্জিনা খাতুন অসুস্থ বলে জানা গেছে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য তানজিম খান বলেন, আমরা কয়েকমাস আগেই দায়িত্বগ্রহণ করেছি৷ আর এই ঘটনাটা গতবছরের। তবে যদি কোনো বিষয় তদন্তাধীন থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আর অগ্রসর হওয়া যায় না। আমরা আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখি। যদি আসলেই এমনটি হয়ে থাকে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলবো। 

এবিষয়ে উপাচার্যের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *