
আজকের কাগজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। এ পর্যন্ত উত্তর সিটিতে নয়টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত আটটির সঙ্গে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটের ইজারা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সেখানেও এ বছর পশু কেনাবেচা চলবে বলে নিশ্চিত করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, গাবতলীসহ মোট ১০টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে শনিবার পর্যন্ত। তবে আরও তিনটি হাটের দরপত্র আজ রোববার (১ জুন) খোলা হবে। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর পাওয়া গেলে সর্বমোট ১৩টি হাট বসবে এবারের ঈদে।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ৭ জুন ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী ৩ জুন থেকে রাজধানীতে হাট শুরু হওয়ার কথা। ঈদের দিনও পশু বিক্রি হয়, তাই অন্তত পাঁচদিনের বেচাবিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি প্রথম দফায় ১০টি অস্থায়ী হাটের জন্য গত ২৯ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে বাড্ডার ইস্টার্ন হাউজিং ও খিলক্ষেত বনরূপা হাট আদালতের আদেশে বাতিল হয়। এ দফায় মাত্র তিনটি হাটে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর পাওয়া যায়।
ইজারা পেলেন যারা, ১. মস্তুল চেকপোস্টের পাশে হাট: ইজারা পেয়েছে সুরমি ইন্টারপ্রাইজ, মালিক মজিবুল্লা খন্দকার। তবে হাট পরিচালনায় আছেন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন। ২. তেজগাঁও পলিটেকনিকের পাশে হাট: পেয়েছে জায়ান এন্টারপ্রাইজ, মালিক যুবদলের মনিরুজ্জামান। ৩. ভাটারা সুতিভোলা খালপাড়ের হাট: একমাত্র দরপত্রদাতা তামিম এন্টারপ্রাইজ, মালিক রফিকুল ইসলাম (৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক)। ৪. উত্তরা দিয়াবাড়ি হাট: ১০ কোটি ১ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে এস এম ব্রাদার্স, মালিক এস এম খোকন (স্বেচ্ছাসেবক দলের সংগঠনিক সম্পাদক)। ৫. মিরপুর-৬ ইস্টার্ন হাউজিং হাট: পেয়েছে সোহাগ এন্টারপ্রাইজ, মালিক রতন মিয়া, স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ৬. বছিলা ৪০ ফুট সড়ক হাট: ইজারা পেয়েছে আহাদ এন্টারপ্রাইজ, মালিক জামাল মৃধা (মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক)। ৭. উত্তরা-১০ রানাভোলা হাট: পেয়েছে আতিকুর রহমান অ্যান্ড কোং, মালিক আতিকুর রহমান (সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, মহানগর উত্তর বিএনপি)। ৮. উত্তরখান কাঁচকুড়া বাজার হাট: পেয়েছে আরহাম এন্টারপ্রাইজ, মালিক আরশাদুল কবির; সহযোগিতায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা শাহ মিরাজ। ৯. খিলক্ষেত এক্সপ্রেসওয়ে নিচের হাট: পেয়েছে ক্ল্যাসিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মালিক মো. হাবিবুর রহমান (সাবেক যুবদল নেতা)।
ডিএনসিসি ৯টি হাট থেকে ২৫ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করছে।
বিশেষ কিছু দর নিম্নরূপ: ১. মস্তুল হাট: সরকারি দর ১ কোটি ৭ লাখ, সর্বোচ্চ দর ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২. তেজগাঁও হাট: সরকারি দর ৬৪ লাখ, ইজারা হয়েছে ২ কোটি ১৭ লাখে। ৩. দিয়াবাড়ি হাট: সরকারি দর ৮ কোটি ৯০ লাখ, ইজারা ১০ কোটি ১ লাখ। ৪. মিরপুর-৬ হাট: সরকারি দর ১ কোটি ৩৮ লাখ, ইজারা ২ কোটি ৫৫ লাখ। ৫. বছিলা হাট: ইজারা হয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখে (সরকারি দর থেকে ৫১ লাখ বেশি)। ৬. রানাভোলা হাট: সরকারি দর ৮১ লাখ, ইজারা ৯৫ লাখ টাকা।
গাবতলী হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা টিএইচ এন্টারপ্রাইজ, মালিক আলী হায়দার, ২৫ কোটি টাকার দর দিয়েছেন। এটি এক বছরের জন্য ইজারা হবে।
প্রথম দফায় ২২ কোটি টাকায় দর জমা পড়ে, কিন্তু প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ তা বাতিল করেন। দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা এরফান ট্রেডার্স, মালিক এস এ সিদ্দিক (বিএনপি নেতা)। গাবতলী হাটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
কালশী বালুর মাঠ হাটের সরকারি দর ছিল ৮০ লাখ, সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে মাত্র ৩০ লাখ। তাই তৃতীয় দফায় আজ (১ জুন) দরপত্র খোলা হবে।
এ হাটের সম্ভাব্য ইজারাদার মাসুদুর রহমান (স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক)। হাট চূড়ান্ত না হলেও তার লোকজনকে হাট বসানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
আজ রোববার আরও তিনটি হাটের দরপত্র খোলা হবে। এই তিনটি হাট হল- মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার, রামপুরা পূর্ব হাজীপাড়া ইকরা মাদ্রাসার মাঠ ও কালশী হাট
ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম জানান, “দুটি হাটের সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল, শনিবার আরও সাতটি চূড়ান্ত হয়েছে। ইজারাদারদের টাকা জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাবতলী হাটের কাগজ যাচাই চলছে।”
যদিও পশুর হাটের ইজারায় উচ্চমূল্য অর্জন করায় ডিএনসিসি সন্তুষ্ট থাকতে পারে, কিন্তু হাটগুলোর ইজারাদারদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একে একে বিএনপি সংশ্লিষ্টদের হাতে হাট পরিচালনার দায়িত্ব যাওয়া স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সমীকরণকেও ইঙ্গিত করছে। একই সঙ্গে গাবতলী হাটের ঝুলে থাকা অবস্থান প্রশাসনের দ্বিধানীতিকেই স্পষ্ট করছে।