
সম্প্রতি মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদ-এর একটি নিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে নানা ধরনের বিতর্ক ও অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে ঘিরে এই আলোচনা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরও কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে—যেমন ডেটাবেজ মুছে ফেলা, কর্মী ছাঁটাই, বকেয়া বেতন ইত্যাদি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নগদ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে একটি বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
নগদের বক্তব্য অনুযায়ী, জাকিয়া সুলতানা জুঁইয়ের নিয়োগ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রচলিত বিধিবিধান মেনেই। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেকোনো নিয়োগের সময় একাডেমিক ফলাফল, প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা ও পেশাগত যোগ্যতা যাচাই করা হয় এবং এই নিয়োগেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়োগের বিষয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, তাই সেটি পুনরায় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার অফিস চলাকালে নগদের কিছু কর্মী ডেটাবেজ ধ্বংস করেছেন। এ বিষয়ে নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, ঈদুল আজহার ছুটিকে সামনে রেখে গ্রাহকসেবা সচল রাখা এবং বিশেষ কিছু বিপণন ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতি ছিল ওইদিনের কাজের মূল বিষয়। কর্পোরেট সংস্কৃতিতে ছুটির দিনেও কর্মীদের যুক্ত থাকা নতুন নয়—আগেও বড় ক্যাম্পেইনের আগে কর্মীরা শুক্রবার-শনিবার কাজ করেছেন।
নগদ জোর দিয়ে বলেছে, প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ডেটাবেজ নষ্ট হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটির ডেটা বিভিন্ন জায়গায় ব্যাকআপ আকারে সুরক্ষিত রয়েছে। কোনো ধরণের অনিয়ম হলে তা তদন্তে ধরা পড়বে বলেও তারা আশ্বস্ত করেছে।
কয়েকটি গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেপিএমজিকে সহযোগিতা করার অভিযোগে কিছু কর্মীকে কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। নগদের দাবি, এই অভিযোগ সত্য নয়। বরং ডিজিটাল ব্যাংক চালুর লক্ষ্যে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে—যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। এ প্রসঙ্গে ডাক বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যেখান থেকে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে নগদ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
আরও একটি অভিযোগ হলো, কিছু কর্মকর্তাকে হঠাৎ করে একসঙ্গে কয়েক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, যা নাকি অনিয়ম। নগদ বলছে, এই কর্মকর্তাদের বেতন বরাবরই অনুমোদিত ছিল, তবে প্রশাসনিক কারণে নিয়মিত ছাড় করা হয়নি। পরে দেশের একজন শীর্ষ আইনজীবীর পরামর্শে এবং প্রচলিত শ্রম আইন অনুসরণ করেই তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়। নগদের দাবি অনুযায়ী, এখানে কোনো আইনি বা নীতিগত ব্যত্যয় ঘটেনি।
নগদ বলছে, সব ধরনের অভিযোগ ও বিতর্ক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণ সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে। তারা বলেছে, দেশের প্রচলিত আইন, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ম মেনেই প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়োগ, বেতন, তথ্য সুরক্ষা—সব ক্ষেত্রেই তারা স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।
নগদ-এর মতো একটি বড় আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যথেষ্ট গুরুত্বের দাবি রাখে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাখ্যা ও পদক্ষেপগুলো এও দেখায় যে, তারা নিজস্ব প্রক্রিয়া ও নিয়মনীতি মেনেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, যাচাই-বাছাই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতামতই এই বিতর্কের চূড়ান্ত জবাব দেবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।