Tuesday, June 3
Shadow

কর কাঠামোয় মৃদু রদবদলঃ বড় করছাড় নেই, সীমিত স্বস্তি কিছু খাতে

মূল্যস্ফীতি চড়া, মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। তবুও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ করদাতাদের জন্য বড় কোনো করছাড়ের সুযোগ থাকছে না। শনিবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকছে।

অর্থাৎ, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না। বরং কিছু ব্যবসায়িক খাতে কর হার বাড়ানো হতে পারে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার বেড়ে যেতে পারে। লাভ-লোকসান যাই হোক, নির্দিষ্ট হারে যে কর দিতে হয়, সেটাও বেড়ে যেতে পারে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে সীমিত করছাড় থাকছে। যেমন ব্যক্তিশ্রেণিতে ন্যূনতম কর কিছুটা কমানো হতে পারে, জমি কেনাবেচায় কর কমানোর চিন্তাও আছে। কিছুক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামীকাল সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। যদিও বাজেটে কর কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই, কিছু টুকিটাকি পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকার মতোই থাকছে। তবে আগামী দুই করবর্ষের জন্য করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব থাকতে পারে। এছাড়া, জুলাই আন্দোলনে আহত গেজেটভুক্ত ব্যক্তিদের আয়সীমা পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।

বর্তমানে ন্যূনতম কর এলাকাভেদে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। নতুন করদাতাদের উৎসাহিত করতে এই পরিমাণ কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হতে পারে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য করযোগ্য আয়ের গণনায় বিভিন্ন ভাতাসহ করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব আছে। এতে কিছুটা স্বস্তি পাবেন চাকরিজীবীরা।

বর্তমানে দেশে ১ কোটি ১১ লাখ টিআইএনধারী আছেন, কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেন গড়ে মাত্র ৪০ লাখ। মূল্যস্ফীতির চাপ ও কম আয় বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও।

রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কমানো হচ্ছে। এখন ৪৫ ধরনের সেবা নিতে আগের অর্থবছরের রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হয়। এই সংখ্যা কমানো হবে। তবে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকবে।

দানের ক্ষেত্রে করছাড়ের সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে দান করমুক্ত থাকে। এবার এতে আপন ভাইবোনকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে।

কর্মচারীদের পারকুইজিট অনুমোদনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করার প্রস্তাবও থাকতে পারে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয় এবং তার আওতায় প্রাপ্ত সুবিধাগুলো করমুক্ত থাকবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। তবে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করতে পারলে এই হার ২৫ শতাংশ থাকবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২০ শতাংশই থাকবে।

মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজের ওপরও করহার কমানো হতে পারে।

তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হলে লাভ-লোকসান নির্বিশেষে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়, যা এবার ১ শতাংশ করার প্রস্তাব আছে। অর্থাৎ বিক্রির মোট আয়ের ওপর ১ শতাংশ কর দিতে হবে।

জমি কেনাবেচায় করহার এলাকাভেদে কমানো হতে পারে। বর্তমানে এটি ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ। নতুন হার হতে পারে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ। ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকতে পারে, তবে করহার এলাকাভেদে বাড়ানো হবে। অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগও রাখা হতে পারে।

বাজেট বক্তৃতায় পাচার করা অর্থ ও সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের ঘোষণা আসতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা যদি দেশে অর্জিত আয়ের ওপর কর না দেন, তবে সেই আয়ের ওপর জরিমানা আরোপ করা হবে।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ায় রেফ্রিজারেটর, এসি ও মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে শুল্ক কমার ফলে বাস, মাইক্রোবাস, চিনি, বিদেশি মাখন, ড্রিংক, সিরিশ কাগজ, ক্রিকেট ব্যাটের দাম কমতে পারে। রড, ফেসওয়াশ, লিপস্টিক, চকলেটের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতিতে আবগারি শুল্ক নেই। এই সীমা তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া শুল্কের স্তর পুনর্বিন্যাস করার কথাও ভাবছে সরকার।

অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত সরকার যদি আগের ছকে হালকা পরিবর্তন করে বাজেট দেয়, তাহলে তা আশাহত করবে। তাদের উচিত ছিল বৈষম্যবিরোধী, কর্মসংস্থানমুখী এবং জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়ন করা।”

তিনি বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে প্রায় ৯ মাস সময় ছিল, তাই সময়ের অভাবের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।” বাজেট প্রস্তাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি গুরুত্ব না পাওয়া, শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহ না দেখানোতেও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *