
চীনের হ্যফেই শহরে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড রাডার এক্সপো। আধুনিক রাডার প্রযুক্তি নজর কেড়েছে বিশ্বের। অন্যদিকে চীনের ছিংহাইয়ের সিনিং শহরের চালু হলো চীনের সবচেয়ে বড় উইন্ড প্রোফাইলার রাডার। একদিকে আন্তর্জাতিক মেলায় নতুন সম্ভাবনার প্রদর্শনী; অন্যদিকে বাস্তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে রাডার চিত্র—প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যে শুধু প্রদর্শনেই সীমাবদ্ধ নেই, সেটাও স্পষ্ট হলো চীনের এই অর্জনে।সামরিক ও বেসামরিক দুই খাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে যেসব উচ্চপ্রযুক্তি রাডার—তা এক ছাদের নিচে দেখতে ভিড় করেছেন হাজারো প্রযুক্তিপ্রেমী।চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপ করপোরেশনের প্যাভিলিয়নে চোখে পড়েছে হাই-মোবিলিটি, মাল্টিফাংশনাল, এয়ার ডিফেন্স ও অ্যান্টি-মিসাইল সক্ষম রাডার।চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপ করপোরেশনের টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট প্রধান লি চি জানালেন, ‘আমরা এখানে চারটি প্রধান থিমে ৪০০টিরও বেশি ইলেকট্রনিক তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করছি—যেমন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, বুদ্ধিমান সিস্টেম ও নিন্ম উচ্চতার আকাশ অর্থনীতির জন্য একটি আলাদা প্রদর্শনী অঞ্চল।’শুধু সামরিক নয়—দুর্যোগ সতর্কতা, স্মার্ট সিটি এবং নিম্ন-আকাশ অর্থনীতিতে ব্যবহৃত অনেক বেসামরিক যন্ত্রও নজর কেড়েছে।চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ২৩তম রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক চিন ছাংসোং জানালেন, ‘এটি একটি ছোটখাট অথচ পূর্ণাঙ্গ আবহাওয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র। দেশের নানা প্রান্তে এটি বাস্তবসম্মত আবহাওয়ার তথ্য দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।’কম উচ্চতায় উড়ে আসা ড্রোন বা ক্রুজ মিসাইল অনেক সময় এড়াতে পারে সাধারণ রাডারের চোখ। সেই চ্যালেঞ্জেই এবার চীনের এক্সপোতে এসেছে নতুন প্রজন্মের সেন্সর ও অ্যান্টি-স্টেলথ প্রযুক্তি।শব্দ শনাক্তকারী একটি ইউনিট যা দেখতে অনেকটা তিনতলা ছাতার মতো—এটি ড্রোনের গতিপথ হিসাব করতে পারে শব্দ তরঙ্গ ধরে।এক বিশেষজ্ঞ জানালেন, ‘এটি ক্রমাগত ঘোরানো এবং স্ক্যান করে কাজ করে। ৩৬০-ডিগ্রিতে বস্তুর কম উচ্চতার ছবি তোলে। সন্দেহজনক লক্ষ্যবস্তু থাকলে এটি অ্যালার্ম বাজবে, এবং এর ট্র্যাকিং টার্নটেবলটি লক হয়ে লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করবে। আমাদের রাডার সরঞ্জামের এই মডেলটি পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে কোয়াডকপ্টার ড্রোন শনাক্ত করার মতো করে ডিজাইন করা হয়েছে।’এটি ৩৬০ ডিগ্রি রেঞ্জে গোলাবারুদ, ট্যাকটিক্যাল এয়ারক্রাফট, এমনকি ড্রোন-হেলিকপ্টার পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে। কঠিন ভূপ্রকৃতিতেও এটি কার্যকর।অন্যদিকে উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে শুরু হয়েছে বন্যার মৌসুম। আর এই সময়েই চালু হলো দেশের সবচেয়ে বড় উইন্ড প্রোফাইলার রাডার, যা উচ্চমাত্রার আবহাওয়াগত নজরদারির সক্ষমতা বাড়াবে কয়েকগুণ।সিনিং শহরের শীর্ষে, সিয়াওইয়ু পাহাড়ের ওপর নির্মিত এই রাডার প্রতি ১২০ মিটার পর পর বাতাসের গতি ও ঘূর্ণি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।সাধারণ রাডার যেখানে আট কিলোমিটার পর্যন্ত তথ্য দেয়, সেখানে এটি ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের তীব্রতা ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এটি দিতে পারে টর্নেডো, শিলাবৃষ্টি কিংবা ভারি বৃষ্টির আগাম বার্তা।বলা চলে, বন্যার মতো দুর্যোগে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় নতুন একটি প্রতিরক্ষা দেয়াল গড়ে তুলছে চীনের এই রাডার প্রযুক্তি।
সূত্র: সিএমজি