Tuesday, July 22
Shadow

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়ায় কঠোরতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে ভিসা দান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে নতুন নির্দেশ দিয়েছে—সব ধরনের শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকার নির্ধারণ (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) আপাতত বন্ধ রাখতে। এক গোপন সরকারি মেমো অনুযায়ী, এই নির্দেশের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থী ও বিদেশি বিনিময় ভিসার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক পর্যবেক্ষণ আরও কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করা।

এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এসেছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক অভিযানে নেমেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করছেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘বামপন্থী’ ভাবধারার আধার হয়ে উঠেছে এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা ইহুদি বিদ্বেষ (এন্টিসেমিটিজম) দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।


সিএনএস নিউজের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মেমোতে বলা হয়েছে—যেসব শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনকারীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, সেগুলো বহাল থাকবে। তবে নতুন করে কাউকে সময় দেওয়া হবে না ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, সব শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বিস্তৃত করা হবে। তবে এই যাচাই কী ধরণের কনটেন্ট বিশ্লেষণ করবে—তা স্পষ্ট করা হয়নি।

এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের—বিশেষ করে চীনা শিক্ষার্থীদের—বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করে।” বর্তমানে কয়েক লাখ চীনা শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত।


এই নীতির ফলে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গভীর উদ্বেগে পড়েছে। কারণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে টিউশন ফি থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আয়ের বড় অংশ পায়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেলে তা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ভিত্তিকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।


বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দ রাখা ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অনুদান বন্ধ করেছে এবং আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, এই তহবিল কাটা দেশের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

সাম্প্রতিক আরও এক পদক্ষেপে হাভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি এবং বিদেশি গবেষক নিয়োগের অধিকারও বাতিল করে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন, যদিও পরবর্তীতে এক ফেডারেল বিচারক সে সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্তগুলো ঘিরে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এসব পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, তারা বরং ‘স্বাধীন মতপ্রকাশ’ রক্ষায় কাজ করছে এবং ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ রুখতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও প্রশাসনের বক্তব্য হলো—যুক্তরাষ্ট্রে আগতদের উপযুক্ত যাচাই প্রয়োজন—তবে এই নীতিগুলো যে বিশ্বজুড়ে মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও আকর্ষণ হ্রাস করতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে, বিশ্বের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যখন ভিসা পাওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তায় পড়বেন, তখন এর প্রভাব শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, পড়বে গোটা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *