
ক্যারিয়ার, জ্ঞান ও উদ্যোক্তা চর্চার সম্মিলনে এক অনন্য আয়োজন
আধুনিক বিশ্বে শিক্ষা আর কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়—এখন তা দক্ষতা, উদ্ভাবনী চিন্তা, নেতৃত্বগুণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম। এই উপলব্ধিকে ধারণ করেই “IIUC Business Fest 2025” আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের বিজনেস ক্লাব। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে (৬ ও ৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন পরিণত হয়েছিল সম্ভাবনাময় তরুণদের মেধা, স্বপ্ন ও ক্যারিয়ার লক্ষ্যকে একত্র করার এক গন্তব্যস্থলে। কর্পোরেট বাস্তবতা, উচ্চশিক্ষার নানামুখী দিক, সৃজনশীল চিন্তা ও উদ্যোক্তা চেতনার এক চমৎকার সমন্বয় ঘটেছিল এই ফেস্টে। এই আয়োজনের নানা দিক ও অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিপার্টমেন্টের ৫০তম ব্যাচের এলামনাই মোঃ খালেদ সাইফুল্লাহ।
★ জব ফেয়ার: ক্যারিয়ারের প্রথম দরজাটি খুলে যাক এখানেই
“যেখানে স্বপ্নেরা খোঁজে বাস্তবতার ঠিকানা, সেখানে জন্ম নেয় ক্যারিয়ার নামক যাত্রা।”
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জ্ঞান, দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাসকে যখন বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করার সময় আসে, তখন দরকার হয় একটি শক্ত ভিত—আর সেই ভিত্তি গঠনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে এই জব ফেয়ার। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ২০টিরও বেশি কোম্পানির সরাসরি অংশগ্রহণে আইআইইউসি বিজনেস ক্লাবের আয়োজিত এই সেগমেন্টটি ছিল গোটা ফেস্টের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর, কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক আয়োজনগুলোর একটি।
Smart Group, Grameenphone, Evercare Hospital, KSRM, BSRM, Exim Bank, Walton, Pacific Jeans, Azim Group, Chittagong Stock Exchange—প্রতিষ্ঠানগুলোর হিউম্যান রিসোর্স (HR) টিম এখানে এসে শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত (CV) সংগ্রহ করে, তাদের সঙ্গে এক-একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথোপকথনে যুক্ত হন। কেবল চাকরির সুযোগই নয়, বরং ক্যারিয়ার সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা, পেশাগত আচরণ, সিভি প্রস্তুতির কৌশল, এবং ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মূল্যবান পরামর্শ দেন তারা।
এই ফেয়ারে অংশগ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থীই প্রথমবারের মতো কর্পোরেট জগতে পা রাখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। অনেকে সরাসরি ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, কেউ কেউ পেয়েছে ইন্টার্নশিপ বা ট্রেইনিংয়ের অফার। সদ্য স্নাতক বা ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল ক্যারিয়ার পরিকল্পনার এক মোক্ষম সুযোগ, যেখানে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরজায় কড়া নাড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে পেরেছে।

★ এডু ফেয়ার: উচ্চশিক্ষার দিগন্ত ছোঁয়ার গল্প
“শুধু স্বপ্ন দেখাই নয়, তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথও বাতলে দেয় সঠিক নির্দেশনা।”
IIUC Business Fest 2025-এর অন্যতম সমৃদ্ধ ও আগ্রহোদ্দীপক অংশ ছিল এডু ফেয়ার। উচ্চশিক্ষা বিষয়ক অনিশ্চয়তা, বিভ্রান্তি কিংবা হাজারো প্রশ্নের উত্তর যেন মিলেছিল এখানেই। Edu Hub, PFEC, Faith Overseas, IIUM, Nusair Education, Zain Global, Speakers Council সহ ১৪টি আন্তর্জাতিক শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করে, যারা স্বপ্নবাজ তরুণদের জন্য বিশ্বের দরজা খুলে দেওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া ও তুরস্ক—এইসব দেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা, স্কলারশিপ সুযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রক্রিয়া ও স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত নানামুখী তথ্য সরাসরি জানার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অংশগ্রহণকারীরা একদিকে যেমন নিজেদের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য নিজস্ব এক শিক্ষা-নকশা তৈরি করতে পেরেছে।
এই ফেয়ারে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যারা দিশেহারা ছিল, তারা পেয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতাপুষ্ট পরামর্শ, বিশ্বমানের শিক্ষায় নিজেদের যুক্ত করার বাস্তব কৌশল। শুধুমাত্র বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখানো নয়, বরং সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলার বাস্তব পরিকল্পনার রূপরেখা উপহার দিয়েছে এ আয়োজনটি। আন্তর্জাতিক শিক্ষা নিয়ে আগ্রহী যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্য এটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

★ এসএমই ফেয়ার: ছোট উদ্যোগে বড় স্বপ্ন
“উদ্যোক্তা মানেই প্রতিদিনের সাহস, প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শেখা, এবং প্রতিটি ছোট পদক্ষেপে বড় অগ্রগতি।”
ব্যবসায় শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তোলার এক প্রাণবন্ত প্রয়াস ছিল SME ফেয়ার। এখানে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের সুযোগ পান, যা একদিকে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়ক, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তব উদ্যোক্তা জগতের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের দ্বার খুলে দেয়।
এই প্ল্যাটফর্মে ছাত্ররা নিজেদের স্টার্টআপ আইডিয়া, হাতে তৈরি পণ্য কিংবা সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে অংশগ্রহণ করে—তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবতার রূপ পায়। উদ্যোক্তারা পণ্য নিয়ে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, বুঝতে পারেন বাজারের চাহিদা ও প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে, দর্শনার্থীরা পরিচিত হন নতুন নতুন ভাবনা, উদ্ভাবন ও সেবার সঙ্গে, যা তাঁদের ভোক্তা অভিজ্ঞতাকে করে সমৃদ্ধ।
এসএমই ফেয়ার কেবল ব্যবসা বিক্রির জায়গা ছিল না—এটি ছিল শেখার, অনুপ্রেরণা নেওয়ার, এবং ভবিষ্যতের পথচলায় আত্মবিশ্বাস অর্জনের এক উন্মুক্ত পাঠশালা। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আয়োজনটি হয়ে উঠেছিল এক বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝাঁপি, যেখানে তারা প্রথমবারের মতো স্বপ্নের পণ্য হাতে নিয়ে জনসম্মুখে উপস্থাপন করার সাহস পেয়েছে। আয়োজক কমিটির এই দূরদর্শী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তরুণ সমাজে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ।

★ আর্ট এক্সিবিশন: ক্যানভাসে কথার চেয়েও গভীর ভাষা
“যেখানে শব্দ থেমে যায়, সেখানেই শুরু হয় শিল্পের কথা।”
শব্দের সীমাবদ্ধতা যখন অনুভূতিকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না, তখনই শিল্প আসে নিজের নীরব অথচ গভীর ভাষায়। ঠিক তেমনই, আইআইইউসির শিক্ষার্থীদের হাতের তুলিতে ফুটে ওঠে একেকটি জীবন্ত বার্তা, যার প্রতিটি রেখায়, রঙে এবং ছায়ায় লুকিয়ে থাকে মনের গভীর অভিব্যক্তি। ব্যবসায় প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যেও যে একটি শিল্পমন লুকিয়ে থাকে, সেটিই যেন এই আর্ট এক্সিবিশনের মাধ্যমে নতুনভাবে উন্মোচিত হয়।
চিত্রকর্ম, ক্যালিগ্রাফি, ডিজিটাল আর্ট কিংবা হাতের তৈরী কলার নানা মাধ্যম—সব মিলিয়ে একটি চোখধাঁধানো আয়োজন ছিল এটি। ইসলামী শিল্পধারা, মানবতা, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস, পরিবেশ ও কল্পনার বিস্তার—এই সব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করেছে তাদের সৃজনশীল ভাবনা ও চিন্তার গভীরতা।
একদিকে ইসলামের অপার সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়েছে ক্যালিগ্রাফির অলঙ্কারে, অন্যদিকে নারীর শক্তি, শিশুর হাসি, বৈষম্যের প্রতিবাদ, কিংবা ঐতিহাসিক ঘটনার শিল্পরূপে প্রতিফলন ঘটেছে সুনিপুণ ব্রাশস্ট্রোকে। ডিজিটাল আর্টে ফুটে উঠেছে আধুনিক জীবনের ছাপ, প্রযুক্তি ও বাস্তবতার সংমিশ্রণ। দর্শনার্থীরা শুধু ছবি দেখেননি—তারা অনুভব করেছেন শিল্পের নীরব ভাষা, যার আবেদন শব্দের চেয়ে বেশি স্পষ্ট, বেশি শক্তিশালী।
এই প্রদর্শনী শুধু একটি চিত্র প্রদর্শনী ছিল না, এটি ছিল ব্যবসায় শিক্ষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতা ও আত্মপ্রকাশের এক অনন্য উদাহরণ। যারা শিল্পে বিশ্বাস করেন, যারা মানবিক অনুভবকে ক্যানভাসে তুলে ধরতে ভালোবাসেন—তাদের জন্য এটি ছিল আত্মার খোরাক এবং মননশীলতার উৎসব।
★ সিভি ক্লিনিক ও মক ইন্টারভিউ: প্রস্তুতি সফল ক্যারিয়ারের সহযাত্রী
“একটি ভালো জীবনবৃত্তান্ত কখনো কাগজে লেখা একটি বর্ণনা নয়, বরং তা একজনের স্বপ্ন, প্রচেষ্টা ও ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।”
পেশাগত জীবনে প্রবেশের প্রথম ধাপ শুরু হয় একটি সুনির্মিত জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি থেকে। আর সেই সিভিই যেন হয়ে ওঠে একটি স্বপ্নের রূপরেখা—যেখানে লুকিয়ে থাকে একজন তরুণের অতীত প্রচেষ্টা, বর্তমান প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এই উপলব্ধিকেই বাস্তবে রূপ দিতে আয়োজন করা হয় সিভি ক্লিনিক ও মক ইন্টারভিউ সেশন।
এই আয়োজনে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বপ্রস্তুত জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করে, আর প্রশিক্ষকরা তাতে দেন কাঙ্ক্ষিত সংশোধনী, গঠনমূলক মন্তব্য এবং বাস্তবধর্মী পরামর্শ। কেবল তথ্য ঠিক করা নয়—সিভির ভাষা, বিন্যাস, আকর্ষণীয় উপস্থাপন, এমনকি কীভাবে একজন নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়—এসব খুঁটিনাটি বিষয়েও বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেন তারা।
এর পাশাপাশি, মক ইন্টারভিউ পর্বটি যেন একটি বাস্তব জগতে প্রবেশের চিত্রনাট্য। শিক্ষার্থীরা যেমন পায় ইন্টারভিউ দেওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা, তেমনি বুঝে নিতে পারে নিজের দুর্বলতা ও শক্তির জায়গা। সংশয় আর অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে বন্দি তরুণ-তরুণীরা এই সেশনের পর পরিণত হন আত্মবিশ্বাসী প্রার্থী হিসেবে—যাদের চোখে তখন এক নতুন লক্ষ্য, এবং হৃদয়ে এক নতুন সাহস।
এই আয়োজন প্রমাণ করে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের জ্ঞানকে বাস্তব কর্মজীবনে রূপান্তর করতে হলে প্রয়োজন এমন সহায়ক প্রস্তুতির। এমন একটি সহমর্মী এবং সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার যাত্রার এক নির্ভরযোগ্য সহচর হয়ে উঠেছে।
★ পোস্টার প্রেজেন্টেশন: সবুজ ভাবনায় ব্যবসা – গ্রিনোভেশনের পথে নতুন প্রজন্ম
IIUC বিজনেস ফেস্ট ২০২৫-এর অংশ হিসেবে আয়োজিত পোস্টার প্রেজেন্টেশন: গ্রিনোভেশন – সবুজ ধারণাভিত্তিক ব্যবসা ছিল একটি চিন্তাশীল ও প্রভাববিস্তারী আয়োজন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণা, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক সচেতনতা তুলে ধরার সুযোগ পায়। আয়োজনের পরিকল্পনা, প্রচার এবং শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্তকরণ ছিল সুপরিকল্পিত ও কার্যকর। সরাসরি প্রচার এবং বিভাগভিত্তিক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যা শ্রেণিকক্ষের বাইরেও বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।
এই সেগমেন্টে অংশ নেওয়া সাতটি দল তাদের অভিনব ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করে। তাদের আইডিয়াগুলোর মধ্যে ছিল প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল মেডিসিন স্ট্রিপস, শতভাগ অর্গানিক উপকরণে তৈরি মেহেদি পণ্য ‘হার্বঅরা হেনা’, তরুণদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে ফ্লেভারড টি ব্র্যান্ড ‘লিফোরা’, তুলসী-পুদিনা-লেমন গ্রাস ব্যবহার করে তৈরি মশা নিরোধক প্লান্ট ‘ইকো গার্ড ক্রিয়েশন’, বাঁশের প্যাকেজিংয়ে উপস্থাপিত ভিওরা হেয়ার অয়েল, গ্রামীণ সবুজ উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে টেকসই ‘সবুজ ক্ষুদ্রঋণ’ পরিকল্পনা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরাঞ্চলে আধুনিক ‘ভার্টিক্যাল ফার্মিং’ মডেল। প্রতিটি ধারণা-ই ছিল সময়োপযোগী, সমস্যাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই আয়োজনটি প্রমাণ করেছে—যখন তরুণদের ভাবনায় যুক্ত হয় দায়িত্ববোধ, তখন তা শুধু একটি প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং হয়ে ওঠে আগামীর পৃথিবী গড়ার অনুপ্রেরণা।
★ সেমিনার সেশন: কথা যেখানে খুলে দেয় ভবিষ্যতের দরজা
“একটি বক্তব্য বদলে দিতে পারে দৃষ্টিভঙ্গি, আর দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে দেয় জীবন।”
শুধু পাঠ্যপুস্তকের সীমাবদ্ধতায় আটকে থাকলে সম্ভব নয় জীবনের সত্যিকার রূপরেখা আঁকা। একজন তরুণ শিক্ষার্থীর জন্য বাস্তব জীবনের দিকনির্দেশনা, পেশাগত জগতে পথ চলার নির্দেশচিহ্ন এবং অভিজ্ঞতার আলোচনার চেয়ে কার্যকর কিছু আর হতে পারে না। সেই ভাবনা থেকেই আয়োজিত হয়েছিল সেমিনার সেশন, যেখানে অভিজ্ঞতার ভাষায় খুলে গিয়েছিল ভবিষ্যতের একের পর এক দ্বার।
এই সেশনে উপস্থিত ছিলেন দেশের নানা খাতের অভিজ্ঞ ও সফল পেশাজীবীরা, যারা কেবল বক্তা নন—তারা বাস্তব জীবনের সংগ্রাম, চ্যালেঞ্জ ও বিজয়ের প্রকৃত সাক্ষী। তাঁরা তাদের নিজ নিজ পেশাগত যাত্রার গল্প, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা, এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতির টিপসগুলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিঃসংকোচে ভাগ করে নেন। মো. আনোয়ারুল ইসলাম (জেনারেল ম্যানেজার, Pacific Jeans), মো. আরিফ আহমেদ FCA (AGM, Chittagong Stock Exchange), আশেক মো. শাহাদাত হোসাইন (Executive Director, BEPZA) এবং ড. জামশেদ আলম পাটোয়ারী (রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চুয়েট)–এই গুণীজনেরা তাদের পেশাগত যাত্রা, চ্যালেঞ্জ, সাফল্যের গল্প ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতির নানা দিক নিয়ে হৃদয়ছোঁয়া আলোকপাত করেন।
শিক্ষার্থীরা শুধু নতুন কিছু শোনেনি, বরং এই সেশনের প্রতিটি বাক্য তাদের ভেতরে স্বপ্ন দেখার সাহস, ক্যারিয়ারের পথ খুঁজে পাওয়ার প্রেরণা ও আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তুলেছে। ক্লাসরুমের বাইরের এই অভিজ্ঞতা যেন হয়ে উঠেছিল বাস্তব জীবনের এক জীবন্ত পাঠশালা, যা অনেককেই তাদের লক্ষ্য ও সম্ভাবনার সীমানা চিনে নিতে সহায়তা করেছে।
★ তরুণদের জন্য এক ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা
BM Energy Ltd-এর স্পন্সরশিপ, BD Jobs-এর ক্যারিয়ার পার্টনারশিপ এবং BSHRM, Jamuna TV, Creative Event Chittagong ও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়াগুলোর সহযোগিতায় IIUC Business Fest 2025 হয়ে উঠেছিল একটি প্রাণবন্ত, শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক আয়োজন। এটি ছিল কেবল একটি ফেস্ট নয়, বরং তরুণদের জন্য ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটি অনন্য মঞ্চ। বিভিন্ন সেশনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেমন হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পেয়েছে, তেমনি পেয়েছে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার বাস্তব রূপরেখা। এই আয়োজন নিঃসন্দেহে IIUC-এ শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক, দক্ষতা-বর্ধনমূলক এবং সমাজমুখী কার্যক্রমের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল—যেখানে প্রতিটি তরুণ নিজেকে দেখতে শিখবে সম্ভাবনার আয়নায়।
মোঃ খালেদ সাইফুল্লাহ
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম