
খুলনা: খুলনা মহানগর ছাত্র শিবির আয়োজিত বিভাগীয় ‘কুরআনিক অলিম্পিয়াড’ এর চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (১১ মে) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনার দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, তা’লীমুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এএফএম নাজমুস সউদ এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর কুতুবউদ্দিন।
মহানগর সেক্রেটারি রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াত সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান নাঈম, মহানগর ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, অর্থ সম্পাদক আসিফ বিল্লাহ, সাহিত্য সম্পাদক বেলাল হোসেন, প্রকাশনা সম্পাদক আদনান মল্লিক যুবরাজ, এইচআরডি সম্পাদক সেলিম হোসেন, আইন সম্পাদক আব্দুর রশিদ, মাদরাসা সম্পাদক মুজাহিদুল হক, দাওয়াহ সম্পাদক গোলাম মুয়াজ্জু, ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক ইমরান হোসেন, প্লানিং সম্পাদক নাঈম হোসেন, সোস্যাল মিডিয়া সম্পাদক খায়রুল বাশারসহ প্রমুখ। এছাড়া এক হাজার অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরিবার ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিগত পনের বছর ধরে যারা কুরআনের কথা বলতে দেয়নি, কুরআনের শিক্ষা দিতে দেয়নি এমনকি কুরআনের সমাজ গড়তে দেয়নি জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তারা শুধু পালাতেই বাধ্য হয়নি বরং এদেশে তারা তাদের রাজনীতি করারও অধিকার হারিয়েছে। সুতরাং এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, যারাই কোরানের বিরোধীতা করবে তারাই ইতিহাসের পাতা থেকে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। ইসলামী ছাত্র শিবির সম্পর্কে অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে শিবিরের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। কারণ শিবির কুরআনের শিক্ষা দেয়, নৈতিকতার শিক্ষা দেয়, শিবির মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার শিক্ষা দেয়।’
উল্লেখ্য, ‘কুরআনিক অলিম্পিয়াড-২০২৫’ এ ১২ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ মার্ক হিসাবে এক হাজার জনকে পুরুস্কৃত করা হয়।
প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের আবিদ ইবনে আশরাফ, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন খুলনা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদ নাবিল খান, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইয়েদাতুন্নেছা, চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন বিএন স্কুল এন্ড কলেজ খুলনার ফাতিহা আয়াত, পঞ্চম স্থান খুলনা পাবলিক কলেজের মো. ওয়াছিবুর রহমান, ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন সেন্ট জোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয় খুলনার কাজী নাবিল আহমেদ, সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এ. টি. এম. মুশফিকুর রহমান, অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন খুলনা জিলা স্কুলের আজমাইন হোসেন, নবম স্থান অধিকার করেছেন শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সুমাইয়া আক্তার রুমি ও দশম স্থান অদিকার করেছেন খুলনার সরকারি বিএল কলেজের মালিহা তাসনিম। প্রথম স্থান অধিকারি সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের আবিদ ইবনে আশরাফকে লাবটপ, তাফসির গ্রন্থ ও ক্রেস্ট এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকারি খুলনা সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মোহাম্মদ নাবিল খানের হাতে মোবাইল ফোন, হাদিস গ্রন্থ, ইসলামিক বই ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এছাড়া এক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে সান্তনা পুরুস্কার হিসাবে পবিত্র কুরআনুল কারীম তুলে দেয়া হয়।
১৯৮৫ সালের ১১ মে আল কুরআনের জন্য শীষ মোহাম্মদসহ যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন থেকে প্রতি বছর ছাত্র শিবির ১১ মে কুরআন দিবস পালন করে আসলেও বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যথাযথভাবে দিবসটি পালন করতে দেওয়া হয়নি। আজ ১৫ বছর পর কুরআন দিবস পালন করতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল ভারতের দুইজন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করে। বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর মামলা গ্রহণ করেন। তিনি এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দিলে গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশেও। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই বছর ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আটজন নিহত হন। দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য সেই থেকে এই দিবসটি কুরআন দিবস পালিত হয়ে আসছে।