
সৈয়দ মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম : লাকসামের কৃতি সন্তান কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’র জন্য মনোনীত হয়েছেন।
সাংগঠনিক দক্ষতা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ এশিয়ান সোস্যাল কালচারাল কাউন্সিল কর্তৃক ‘এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’র জন্য মনোনীত হন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) এশিয়ান সোস্যাল কালচারাল কাউন্সিল’র নির্বাহী পরিচালক এম এইচ আরমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এশিয়ান সোস্যাল কালচারাল কাউন্সিল’র নির্বাহী বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহত্তর লাকসামসহ কুমিল্লা অঞ্চলে সাংগঠনিক দক্ষতা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজনকে এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদানে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
আগামী ২২মে ঢাকার ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য ‘বর্তমান সময়ে সু-শাষণ প্রতিষ্ঠায় আমাদের করনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মীর হাসমত আলী।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন লাকসাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাজিমুড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম সামছুল হক ছিলেন লাকসাম পৌরসভার দৌলতগঞ্জ বাজারের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাঁর দাদা মরহুম আলহাজ আবদুল জব্বার, নানা মরহুম আলহাজ রহমত আলী মজুমদার, ফুফা মরহুম আলহাজ চাঁন মিয়াসহ অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, অনেক ভূসম্পত্তির অধিকারী ও সমাজসেবক। সমাজের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের দান-অনুদান ও ভূমিকা ছিলো প্রসংশনীয়। তাঁর পূর্ব পুরুষ এবং স্বজনদের পদাঙ্ক অনুসরন করে মানবিক সেবার ব্রত নিয়ে ছোটবেলা থেকে নিজেকেও একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সামাজিক কার্যক্রমে নিবেদিত অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন।
ছোটবেলা থেকে শিশু-কিশোর সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত তিনি। ‘সেভ দ্যা হিউম্যানেটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিগত করোনা মহামারীর সময় সেবার ব্রত নিয়ে দাঁড়িছেন অসুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে। অনেক মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ, অক্সিজেন সরবরাহ এবং খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। করোনা মহামারীর সময় যখন সারাদেশে তীর অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। তখন সর্বপ্রথম পুরো কুমিল্লায় ওইসব করোনা আক্রান্তদের পাশে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ‘সেভ দ্যা হিউম্যানেটি’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে নিরবিচ্ছন্ন সেবা প্রদান, লাশ দাফন, ফ্রী এম্বুলেন্স সার্ভিস চালুসহ নানাবিধ মানবিক কাজে আন্তরিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন।
এ ছাড়াও বিনামূল্যে রক্তদান, দরিদ্র ও কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, হতদরিদ্রদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ নানাহ রকম সামাজিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সেভ দ্যা হিউম্যানেটি’ ছাড়াও অনেক স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজে অনেক সুখ্যাতি রয়েছে। তিনি অসহায়, হতদরিদ্র এবং নিরপরাধ মানুষদের মামলা-মোকদ্দমায় আইনী সহায়তা প্রদানে অনেক কার্যকর ভুমিকা রেখে চলছেন।
লাকসাম পৌরসভার গাজিমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হলেও পরে আল আমিন ইনস্টিটিউটে তৃতীয় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণির পাস করেন। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে লাকসাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং স্নাতকোত্তর পাস করেন।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন’র বাবা-মা অনেক আগে বিয়োগ হয়েছেন। তিনভাই, তিনবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বড় ভাই মুহাম্মদ শাহ্ আলম মনির ছিলেন নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি)। প্রবাস ফেরত মনির এবং অপর ভাই মুহাম্মদ শওকত আলম সেলিম বর্তমানে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মেঝো বোন,ভগ্নিপতি দু’জনই বিয়োগ হয়েছেন। বড় ভগ্নিপতিও গত হয়েছেন বেশ আগে। বড় বোনের দুই ছেলে সেনাকর্মকর্তা।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন’র বড় ফুফাতো ভাই সাবেক সাংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম হিরু ছিলেন, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। লাকসাম ব্যবসায়ী সমিতি এবং একটি বড় রাজনৈতিক দলের সভাপতিও ছিলেন। বিগত
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব কর্তৃক তিনি গুম হন। ওই গুমের ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে দায়ের করা মামলায় তিনি বাদীপক্ষের আইনজীবী।
তাঁর আপন খালাতো ভাইদের মধ্যে একজন আরেকটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরজন ব্যবসায়ী এবং অনেকগুলো কল-কারখানা রয়েছে তাঁর।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি ব্যবসা-বানিজ্য ও বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
তিনি বর্তমানে দক্ষিন কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দৌলতগঞ্জ গাজিমুড়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির দাতা সদস্য, লাকসাম কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির (বিআরডিবি’র অন্তর্ভুক্ত) সভাপতি, ইসলামী সমাজ কল্যান পরিষদ লাকসাম’র সেক্রেটারি, (যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে আল আমিন ইন্সটিটিউট এবং আল হেদায়া মহিলা মাদ্রাসা পরিচালিত), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসের ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কুমিল্লা ইউনিট’র এর কার্যকরী কমিটির সদস্য, লিগ্যাল এইড কুমিল্লার সদস্য এবং ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল আরাফাহ ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেড’র লিগ্যাল এডভাইজার।
পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল এ মানুষটি দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সালফিয়া তানহিয়াত নুজাইমা দেশ সেরা বিতার্কিক এবং ছোট মেয়ে তাজরিদা মুসাররাত নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। তাঁর সহধর্মীনি গ্রিনেস বুকে স্থান করে নেওয়া কুমিল্লার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজে’ অধ্যাপনা করছেন। তিনি হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
ইতোমধ্যে লাকসামে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একজন ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্বশীল ও মানবিক গুণাবলীর অধিকারী প্রিয় মানুষ হিসেবে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন সাংগঠনিক দক্ষতা ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ সম্প্রতি এশিয়ান সোস্যাল কালচারাল কাউন্সিল কর্তৃক ‘এশিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’র জন্য মনোনীত হওয়ার লাকসামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।