
মোঃ জামাল হোসেন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতকোত্তর), শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালক, ন্যাশনাল গার্লস মাদ্রাসা, ফেনী।
“দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ—ভারত এবং পাকিস্তান। সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে সীমান্ত সংঘর্ষ ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে। এমন উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশ কি সম্পূর্ণ নিরাপদ? যুদ্ধের উত্তাপ কি ছড়িয়ে পড়তে পারে পূর্ব দিকেও?”
বাংলাদেশের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি কি হতে পারে?
“যদি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে। বিশেষ করে, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে চলা বাণিজ্য কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে।
বাণিজ্যিক রুটগুলোতে অবরোধ, শরণার্থী স্রোত এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যুদ্ধের ফলে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়, তাহলে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, কিছু কৌশলগত সুবিধাও আসতে পারে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিকল্প বাণিজ্য রুট হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়তে পারে। তবে সেই সুযোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি এই অস্থির পরিস্থিতিতে?”
এ সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বাংলাদেশের মিত্র কারা!
“যুদ্ধের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে ভৌগোলিক সন্নিকট্য বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করতে বাধ্য করবে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া—এ তিনটি শক্তির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বাংলাদেশের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এই অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলেছে। যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারতের পাশে অবস্থান নেবে, আর চীন পাকিস্তানের পক্ষে। এই অবস্থানে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে নিরপেক্ষতার জন্য।”
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক চাপ কেমন হতে পারে?
“যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি নিরপেক্ষ থাকতে পারবে? আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসতে পারে ভারতের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা এই চাপে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে চীন ও পাকিস্তানের তরফ থেকেও কৌশলগত সমর্থনের আশা করা হতে পারে। এই দুই শক্তির মাঝখানে বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্য রক্ষা কতটা কঠিন হবে? বাংলাদেশ কি এই চাপ সামলাতে সক্ষম?”
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কতটুকু?
“বাংলাদেশ সামরিক শক্তিতে অনেক এগিয়েছে। নিজস্ব ড্রোন প্রযুক্তি, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সমন্বিত সক্ষমতা আঞ্চলিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।
তবে আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এটি কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহের উপর।”
বাংলাদেশের সীমান্তে সতর্কতা ও পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে?
“এই হামলার পর ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন এবং ড্রোন শনাক্তকরণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি প্রবেশপথে কড়া নিরাপত্তা বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশও সীমান্তে অতিরিক্ত নজরদারি এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। যুদ্ধের পরিস্থিতি সামনে রেখে প্রস্তুত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।”
শেষ কথা হল-
“ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রভাব শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং কৌশলগত পুনর্বিন্যাস বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করতে বাধ্য। বাংলাদেশ কি এই উত্তাল সময়ে নিজেকে স্থিতিশীল রাখতে পারবে? নাকি আঞ্চলিক রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে আটকে পড়বে?
সময়ের অপেক্ষা, আর সেই সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতার পরীক্ষা।”