
চীনের উত্তরাঞ্চলের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এখন দেশের সবুজ শক্তি বিপ্লবের বড় চালিকাশক্তি। এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে বাতাস ও সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অঞ্চলটি।
ইনার মঙ্গোলিয়ার চেয়ারপারসন ওয়াং লিসিয়া বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বলছে, নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়ন পরিবেশ নষ্ট না করে বরং পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।’

আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বে রেকর্ড ৫৮৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি যুক্ত হয়েছে, যার ৬৪ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। এই প্রবৃদ্ধিতে ইনার মঙ্গোলিয়ার ভূমিকা ছিল অসাধারণ।
এ অঞ্চলে বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে ১.৪৬ বিলিয়ন কিলোওয়াট, যা চীনের মোট সক্ষমতার ৫৭ শতাংশ। সূর্যের শক্তির সম্ভাবনা রয়েছে ৯.৪ বিলিয়ন কিলোওয়াট, যা জাতীয় সক্ষমতার ২১ শতাংশ।
২০২৩ সালে ইনার মঙ্গোলিয়া ছিল নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, সবুজ হাইড্রোজেন, বিদ্যুৎ সঞ্চয় এবং ইলেকট্রিসিটি ট্রেডিং-এ চীনের শীর্ষে। তাদের মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৭.৬ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ২১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ারে—যা থ্রি গর্জেস ড্যামেরও দ্বিগুণ!
বর্তমানে এ অঞ্চলের ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎই নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। এতে বছরে ১৮ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমে এবং ৬৬ মিলিয়ন টন কয়লার সমতুল্য শক্তি সাশ্রয় হয়।
এই অঞ্চলে সবুজ হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া ও মিথানল উৎপাদনেও জোর দেওয়া হচ্ছে। ৯৪% নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের হারে অঞ্চলটি রেকর্ড গড়েছে। এ ছাড়া, তথ্য প্রযুক্তির জন্য গঠিত বৃহত্তম কম্পিউটিং পাওয়ার বেইসের ৮০% বিদ্যুৎই এসেছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে।
কুবুকি মরুভূমিতে ‘সোলার গ্রেট ওয়াল’ নামে বিশাল প্রকল্প চালু হয়েছে। এর অধীনে সৌর প্যানেল বসিয়ে মরুভূমিকে সবুজ করা হচ্ছে, পাশাপাশি কৃষিকাজ ও পশুপালনের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্প ৪০০ কিমি জুড়ে বিস্তৃত এবং বছরে ১৮০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইনার মঙ্গোলিয়ার নবায়নযোগ্য শক্তির প্রভাব প্রশংসনীয়। ২০২৪ সালে এ অঞ্চলের নবায়নযোগ্য শক্তি ও সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতে সংযোজিত মোট মূল্য আগের বছরের তুলনায় ২০.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। নতুন শক্তি-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি উৎপাদন বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি, জানিয়েছেন ওয়াং লিসিয়া।
এ ছাড়া, কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে বৈদ্যুতিক যানবাহন, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি এবং সৌর প্যানেলের রপ্তানি ৪৫.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.১৮ বিলিয়ন ইউয়ানে।
এ অঞ্চলে নবায়নযোগ্য যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও রপ্তানি যেমন বাড়ছে, তেমনি পরিবেশ পুনরুদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে কুবুছি মরুভূমিতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।
এক সময় ‘মৃত্যুর সাগর’ নামে পরিচিত এই মরুভূমি এখন পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়নের একটি সফল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি কুবুছি মরুভূমিকে একটি ‘পরিবেশগত অর্থনীতির প্রদর্শনী অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণ অনাবাদী ছিল কুবুছি মরুভূমির সুবিশাল এলাকা। কিন্তু গত বছরের শেষে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য সৌর প্যানেল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নাসার আর্থ অবজারভেটরি উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি প্রকাশ করে, যেখানে কুবুছির এই প্রকল্পকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘সোলার গ্রেট ওয়াল’ নামে।
ওয়াং জানান, প্রকল্পটি ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর গড় প্রস্থ ৫ কিলোমিটার। সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে এটি মরুভূমির প্রায় ২ লাখ হেক্টর এলাকায় সবুজায়নে সহায়তা করবে এবং প্রতিবছর ১৮০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এটি যেমন হবে নীল ‘শক্তির দেয়াল’, অন্যদিকে হবে এক সবুজ বর্ম।
সূত্র: সিএমজি বাংলা