গত ১৬ এপ্রিল চীন জানায়, বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের অর্থনীতি ভালোভাবেই এগিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যার মুখেও চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এতে বোঝা যায়, চীনের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী এবং এতে মার্কিন শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পড়েনি।

এই তিন মাসে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১.৮৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ বেশি। এমনকি ২০২৪ সালের পুরো বছরের প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি।
এই সময়ের মধ্যে চীনে—শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৬.৩%, সেবা খাত বেড়েছে ৫.৩%, স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪.২% এবং পণ্যের খুচরা বিক্রি বেড়েছে ৪.৬ শতাংশ।
শুক্রবার চায়না ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেড সিস্টেম জানাল, চীনা মুদ্রা রেনমিনবি বা ইউয়ানের কেন্দ্রীয় বিনিময় হার মার্কিন ডলারের বিপরীতে বেড়েছ দাঁড়িয়েছে ৭.২০৬৯’তে।
চীনের সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের তথ্যে দেখা গেছে, দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে বৈদেশিক বাণিজ্য এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এই সময়ের মধ্যে প্রদেশের মোট আমদানি ও রপ্তানি ছিল ২.১৪ ট্রিলিয়ন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.২ শতাংশ বেশি।
প্রস্তুত ছিল চীন
২০২৫ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর দুই দফা ১০ শতাংশ করে শুল্ক বসায়। কিন্তু চীন আগেই প্রস্তুত ছিল। দেশটি নানা পরিকল্পনা নেয়—ভোক্তাদের কেনাকাটায় উৎসাহ দেওয়া, দেশের বাজারে চাহিদা বাড়ানো ইত্যাদি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির প্রভাব খুব একটা টের পাওয়া যায়নি।
চীন এবার তাদের ২০২৫ সালের ১০টি প্রধান কাজের একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে—অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো। মার্চ মাসে তারা ভোক্তা বাড়াতে একটি বিশেষ পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে। তারা এখন বাইরের ওপর কম নির্ভর করে, নিজেদের বাজার ও প্রযুক্তির উন্নতির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত
যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দুর্বল করতে শুল্ক বাড়ালেও ফল হয়েছে উল্টো। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আতঙ্ক ছড়ায়—শেয়ারবাজারে দর পড়ে যায়, ডলার দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার চীনা পণ্য কম আসায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
চীন কীভাবে মোকাবিলা করছে?
চীন মূলত অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো এবং শিল্প খাত আধুনিক করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করছে। তারা মানুষের খরচ বাড়ানোর জন্য নানা সুবিধা দিচ্ছে, পাশাপাশি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উন্নয়নে জোর দিচ্ছে।
বিশেষ করে ‘হাংচৌর ছয়টি ছোট ড্রাগন’ নামে পরিচিত কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট খাতে দারুণভাবে এগোচ্ছে।
সব মিলিয়ে, চীন নিজের বাজার ও প্রযুক্তির উন্নয়ন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সামলে নিচ্ছে এবং ২০২৫ সালে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের পথেই এগোচ্ছে।
সূত্র: সিএমজি