
রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম ও তার অধীনস্ত পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে একটি ঘুষ-ভিত্তিক সিন্ডিকেট, যারা প্রতিদিন দলিল সম্পাদনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ ও জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে।

সূত্র জানায়, সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলমের নেতৃত্বে পিয়ন জাহাঙ্গীর, নকলনবিশ আওলাদ ও উমেদার আকিব মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। মোটা অংকের ঘুষ না দিলে দলিল সম্পাদন সম্ভব নয়—এমন অভিযোগ করছেন দলিল গ্রহীতা ও দাতারা। বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এমনকি একই জমির একাধিক দলিলও তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম এর আগে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা অফিসে কর্মরত থাকাকালীনও দুর্নীতির অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে তার বেতন প্রায় ৬০ হাজার টাকা হলেও মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। ফরিদপুরে দুই বিঘা জমিতে একতলা বাড়ি, গোপালগঞ্জে দুই একর জমিতে মাছ চাষ, কামরাঙ্গীরচরে ভাইয়ের নামে হেবাদলিল করা ছয়তলা ভবনসহ একাধিক সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, পিয়ন জাহাঙ্গীরের সম্পদের হিসাব আরও বিস্ময়কর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিনটি ফ্ল্যাট, কাজলায় পাঁচ কাঠা জমি, ডেমরায় আরও পাঁচ কাঠা জমি, চাঁদপুরের মতলবে ৮০ শতক জমিতে বাড়ি—সব মিলিয়ে শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক তিনি। অথচ তিনি একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, যার কোনো বৈধ আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি।
সূত্র জানিয়েছে, সাবেক জেলা রেজিস্ট্রারদের ম্যানেজ করে অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বহাল তবিয়তে দুর্নীতির রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কমিশনভিত্তিক দলিল তৈরি, নামজারি ছাড়া রেজিস্ট্রি, খাজনার কাগজ ছাড়াই ভুয়া দলিল—সবই হচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রার ও পিয়নের যৌথ নেতৃত্বে।
স্থানীয়দের ভাষায়, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস যেন এখন এক প্রকার ‘ঘুষের বাজার’। এই সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ।