ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন: বাংলাদেশ আজ স্বাধীন—পাসপোর্টে, মানচিত্রে, জাতিসংঘের সভায়। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত চর্চায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মেরুদণ্ডে এখনও কি আমরা সত্যিকারের স্বাধীন? ১৯৭১ সালে আমাদের পাশে দাঁড়ানো এক ‘মিত্র রাষ্ট্রের’ প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে জানাতে আমরা যেন আজও মাথা নিচু করে চলি। এই কৃতজ্ঞতা এখন এমন এক মনস্তাত্ত্বিক দায়ে পরিণত হয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি বারবার আমাদের ওপর বৈষম্য আর আধিপত্য চাপিয়ে দিচ্ছে।
ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের মনেভাব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার কথা হল, বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করাকে কি কখনোই ভারত বিদ্বেষ বলা যায়?
জলবন্টন থেকে শুরু করে সীমান্তে হত্যা, ট্রানজিট সুবিধা থেকে একচেটিয়া বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন—সব জায়গাতেই একধরনের অদৃশ্য শেকলে বাঁধা পড়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার চর্চা। আর এসব অন্যায় আচরণকে প্রশ্ন করলেই আমাদের শিখিয়ে দেওয়া হয়—“মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল, অতএব চুপ থাকো!” যেন কৃতজ্ঞতা জানানো মানে আত্মসমর্পণ করা, বন্ধুত্ব মানেই নিজের স্বার্থ বিসর্জন।
প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচিত হলেও ভারত থেকে কোন আশা অনুরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি উল্টো, ভারত তার আগ্রাসী মনোভাব এখনো সংযত রাখতে চায়,
বাংলাদেশ কারও দয়ায় স্বাধীন হয়নি। এই দেশের স্বাধীনতা এসেছে রক্তে, অশ্রুতে, আগুনে। ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিল, এটা ইতিহাস। কিন্তু ইতিহাসের ঋণ শোধ করতে গিয়ে কি জাতির ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখা যায়? আজ প্রশ্ন উঠছে—কৌশলগত বন্ধুত্বের নামে যদি একচেটিয়া শোষণ, অবিচার আর হস্তক্ষেপ চলতেই থাকে, তবে সেই বন্ধুত্ব আদৌ বন্ধুত্ব কিনা।
বিশ্ব রাজনীতিতে কোনো সম্পর্কই নিঃস্বার্থ নয়, আমরা সেটা বুঝি। কিন্তু স্বাধীন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের নামে যদি প্রতিনিয়ত অসম আচরণ চলে, সেটা বন্ধুত্বের নাম নিয়ে বৈষম্যের প্রতিষ্ঠা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা ভারতের শত্রু নই। তবে আমরা নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানো মানুষ। তাই আমরা প্রশ্ন তুলব, দাবি করব, অধিকার চাইব—এটাই স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ।
এখন সময় এসেছে আত্মসম্মান আর বাস্তবতাকে একসঙ্গে দেখার। কৃতজ্ঞতা থাকবে ইতিহাসে, কিন্তু বর্তমান চাই ন্যায়ের আলোয়—এটা স্বাধীন জাতির ন্যূনতম দাবিও বটে।
লেখক: তরুণ কলাম লেখক ও
শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ মিডিয়া কমিউনিকেশন এন্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট