বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া সালাহউদ্দিন সালমানসহ ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। শেখ কবির হোসেনের কাবিকো কনস্ট্রাকশনের অফিস ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে তাঁদের আটক করে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ শুক্রবার রাতে তাঁদের আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তারুজ্জামান।
ওসি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সালমানসহ বিভিন্ন পদের ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে শেখ কবিরের ব্যবসায়িক অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় কিছু টাকা-পয়সা ও চারটি কম্পিউটার নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
কে এই শেখ কবির?
শেখ কবির হোসেন একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারের সদস্য। তিনি বাংলাদেশ বীমা সমিতির সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি। হোসেন ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[২][৩][৪] তার পিতা শেখ মোশাররফ হোসেন এবং মাতা রাহেলা খাতুন। তার চাচাতো ভাই ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
হোসেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং সোনালী ব্যাংকে কাজ করেছেন।[৩] ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন।[৩]
হোসেন সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন ফাউন্ডেশন, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারপারসন।[৩] তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। [৩] তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন।[৩] তিনি ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারপারসন।[৬] জুলাই 2005-এ, তিনি হংকং-এর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ লায়ন্স ক্লাবের দুই বছরের মেয়াদের জন্য পরিচালক নির্বাচিত হন।[৭]
১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ হোসেন টুঙ্গিপাড়া অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।[৮]
১৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে, হোসেন বাংলাদেশ বীমা সমিতির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।[৯] তিনি চ্যানেল ২৪-এর একজন পরিচালক এবং আগস্ট ২০১১ সালে এটির টেস্ট ট্রান্সমিশন চালু করেন।[১০]
হোসেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, যা বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলির একটি ব্যবসায়ী সমিতি।[৪] তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে তাদের অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ধর্মঘট না করার জন্য বলেন।[১১] তিনি ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং অলাভজনক HELP (স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) এর চেয়ারপারসন।[৪] তিনি কাবিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।[৪] তিনি মাসুদা ডেইরি নিউট্রিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও।[৪] 2013 সালে, তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক স্টক মার্কেটে সমস্যা তদন্তের জন্য গঠিত একটি প্যানেলের অংশ ছিলেন।[১২]
হোসেন বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অফ বাংলাদেশের চেয়ারপারসন।[১৩] ২০১৭ সালে তিনি পুনরায় সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।[১৪] তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারপারসন। [১৩] তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক।[১৩] তিনি দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু একাডেমির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।[১৫]
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি শেখ কবিরের প্রতিষ্ঠান কাবিকো কনস্ট্রাকশনকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৯ কোটি টাকার একটি কাজ দেওয়া হয়।