
আরাফাত হোসাইন, বাকৃবি থেকে: ছাত্রজীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ভর্তি পরীক্ষা বা এডমিশন। এডমিশনের এই যুদ্ধ যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর ১২ বছরের শিক্ষাজীবনের এক অগ্নিপরীক্ষা। কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পর শুরু হয় আরেক নতুন যাত্রা—ভর্তি সংক্রান্ত নানা জটিলতা। কোথায় কী কাগজপত্র জমা দিতে হবে, সাবজেক্ট চয়েস কিভাবে দিতে হবে, কোন তারিখে কী করণীয়—এসব হাজারো প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পড়ে যায় দুশ্চিন্তায়।
এই দুশ্চিন্তা দূর করতে ও শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে কাজ করে এডমিশন টেস্ট হেল্পলাইন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সকল জটিলতায় সহযোগিতা করার জন্য এমনই একটি সংগঠন হলো বিএইউ এডমিশন টেস্ট হেল্পলাইন (বাউআথ) । এখানে কাজ করেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক, যারা নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে যাচ্ছেন।
এই মানবিক উদ্যোগ এবং নিঃস্বার্থ সহযোগিতাকারী মানুষদের একটি আনন্দমুখর বিকেলের গল্প তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসাইন।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২টায় বাকৃবি টিএসসির দ্বিতীয় তলা মুখরিত হয়ে ওঠে বাউআথ পরিবারের প্রাণবন্ত হাসিতে। চেনা মুখগুলোর দেখা পেয়ে হৃদয় জুড়ে যায় উষ্ণতায়। ২০২৪–২৫ সেশনে বাউথ পরিবারে নতুন করে যুক্ত হয় ১৫ জন সদস্য। আয়োজনের শুরু হয় পরিচিতি পর্বের মাধ্যমে। সিনিয়র সদস্যরা খোশগল্পের ছলে জুনিয়রদের সঙ্গে গড়ে তোলেন আন্তরিক সম্পর্ক। নিজেদের স্কুল-কলেজ, জেলা কিংবা হলে কে কোথায় থাকে—সব খোঁজখবর নেওয়া হয় আরেকবার।
পরিচয় ও আলোচনা পর্বের শেষে শুরু হয় প্রতীক্ষিত বিনোদন ও খেলাধুলার পর্ব। অনুষ্ঠানমালার এই অংশে আনন্দ যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় লেভেলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি তথ্যভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজের বিষয়বস্তু ছিল ‘বাকৃবি’র ইতিহাস, সংস্কৃতি, সংগঠনসমূহ, ক্যাম্পাস লাইফ ও শিক্ষার্থীদের জীবনধারা নিয়ে। এতে অংশগ্রহণকারীরা কেবল নিজেদের জ্ঞানের প্রকাশই করেননি, বরং বাকৃবি সম্পর্কে তাদের ভালোবাসা ও আগ্রহও উঠে এসেছে স্পষ্টভাবে।
কুইজ শেষে শুরু হয় গেম সেগমেন্ট। একে একে শুরু হয় বালিশ বদল, বল নিক্ষেপ, হাড়ি ভাঙা সহ নানা ধরনের আনন্দদায়ক খেলা। প্রত্যেকটি খেলায় সদস্যদের মধ্যে প্রতিযোগিতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল হাসি-ঠাট্টা, মজা ও নির্মল আনন্দ। এই অংশে সিনিয়র-জুনিয়র সকলেই অংশ নিয়ে প্রমাণ করে যে বাউআথ শুধুই একটি সংগঠন নয়—এটি একটি প্রাণবন্ত পরিবার, যেখানে বিনোদন আর বন্ধনের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে। সবশেষে ছিল সকলের অপেক্ষার লটারি রাউন্ড। লটারিতে বিজয়ীরা যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি যাঁরা পাননি, তাঁরাও সমানভাবে উপভোগ করেছেন পুরো মুহূর্তটি।
অনুষ্ঠানের এক বিশেষ মুহূর্ত ছিল বেস্ট মডারেটর অ্যাওয়ার্ড প্রদান। এই সম্মাননা প্রদান করা হয় তাদেরকে, যারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন। ফেসবুক গ্রুপে কমেন্ট, পোস্ট, তথ্য দেওয়া ও সমস্যার দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে যারা বাউথের উদ্দেশ্য ও চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, প্রথম বর্ষের এমন চারজনকে তাদের নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানাতেই এই পুরস্কার। তারা হলেন: ফাহমিদা সুলতানা বর্ষা, সোহেলা আক্তার ফিমা, মারজাবিন ইসলাম মাফি, মাহরুন নেছা আফিয়া।
অনুষ্ঠানের শেষে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের মাহমুদুল হাসান শুভ বলেন, বাকৃবি এডমিশন টেস্ট হেল্পলাইন গ্রুপের সাথে আমি ২০২০ সাল থেকে যুক্ত আছি। কৃষিগুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার দেওয়া থেকে শুরু করে আমার বাকৃবিতে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রুপের দিকনির্দেশনামূলক পোস্ট এবং সাবজেক্ট চয়েস–সংক্রান্ত লাইভ সেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই গ্রুপের কার্যক্রম দেখে নিজের ভালো লাগা থেকেই ২০২২ সাল থেকে গ্রুপের এডমিন প্যানেলে যুক্ত হয়ে বিগত তিন বছর যাবৎ কৃষিগুচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের সঠিক তথ্য, পরামর্শ ও লাইভ সেশনের মাধ্যমে তাদের ভর্তি কার্যক্রম সহজ করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বাকৃবি সহ অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।
ভেটেরিনারি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের তারিকুজ্জামান ইউশা বলেন, আমি বাউথের সাথে ২০২৩ সাল থেকে মডারেটর হিসেবে আছি। এই গ্রুপে যুক্ত হওয়ার মূল কারণ মূলত বাকৃবি এবং কৃষি গুচ্ছে ভর্তি হওয়া সকল শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা, যেন তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়। সকলের মাঝে বাকৃবি এবং কৃষি গুচ্ছ সম্পর্কে অবহিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য আমাদের গ্রুপে প্রতিবছর নতুন মডারেটর নির্বাচন করা হয়। সে অনুসারে এবারও বেশ কয়েকজন মডারেটর আমরা সিলেক্ট করি। তাদের একটিভিটি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমরা তাদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করি এবং সকলের সাথে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমরা একটি গেট টুগেদারের আয়োজন করি, যেন সবাই নিজেদের মাঝে আরও ভালো বন্ধন তৈরি করতে পারে। সেখানে গেম সেগমেন্ট, অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং অনেকের বিদায় সংবর্ধনাও জানানো হয়।
পরে জুনিয়ররা তাদের মনের অনুভূতি জানান। প্রথম বর্ষের মাফি বলেন, আমি বাউথ পরিবারে একজন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। অনেক দিন হলো ভাইদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আজ ভাইদের প্রচেষ্টায় অনেক দিন পর একটি গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়। আজকের প্রোগ্রামে অনেক সেগমেন্টের আয়োজন ছিল। সত্যি, আজ ভাইদের সঙ্গে এইসব মজার মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজকের গেট টুগেদারের ফলে আমাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। বাউথ পরিবারের সকল ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ এরকম একটি গেট টুগেদার আয়োজন করার জন্য।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সকলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার ব্রত নিয়ে বিদায় নেয়।
এই আয়োজন ছিল ভালোবাসা, বন্ধন আর কৃতজ্ঞতার এক চমৎকার প্রকাশ। একসাথে হাসি, গল্প আর স্মৃতির মধ্য দিয়ে বাউআথ আবারও প্রমাণ করেছে—এটি শুধুই একটি সংগঠন নয়, একটি পরিবার।