সূত্র: দেশ রূপান্তর
চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র আসকার দীঘির পাড়ে একটি পাহাড় সাবাড় করে দেয়া হচ্ছে। চারদিকে ঘেরা দিয়ে ভেতরে পুরো পাহাড়টি কেটে ফেলার কার্যক্রম চলছে। নগরীর জালালাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় হরদম পাহাড় কাটা হচ্ছে। আর এ পাহাড় কাটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী ও হিমেল দাশ নামের দুই প্রভাবশালী। সিডিএ’কে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার তথ্য-প্রমাণও আজকের কাগজের হাতে এসে পৌঁছেছে।
একাধিক পত্রিকায় খবর ছাপা হওয়ার পরও কোনো এক রহস্যজনক ক্ষমতার কারণে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব, বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান ও ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমি নিজে প্রকল্প এলাকা ভিজিট করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তারা নির্মাণকাজ করছে। এ ছাড়া পাহাড়কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের নকশা বাতিলের প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে।’
তবে অভিযোগ আছে, এই প্রকৌশলী কাজী হাসান শামসও মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে পাহাড় কাটার বিষয়টি চেপে গেছেন।
আসকারদীঘির পাড় এলাকায় পাহাড় কাটার ঘটনায় স্থানীয় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, শহর থেকে দূরে চোরাগুপ্তাভাবে পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসীকে এবার ঘরের ভিতরের পাহাড় গিলে ফেলা দেখতে হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা দেওয়ার পর ডিডি হিল্লোল বিশ্বাসকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ঘেরা দিয়ে বহুতল ভবন তৈরিতে চলছে সমানে পাহাড় কাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে সিডিএ’র নগর কমিটির অসাধু সদস্যদের অর্থ দিয়ে পাশ করানো হয়েছে এই প্ল্যান। তৎকালীন সরকারের এই কর্মকর্তারা আজ অনেকই গা ঢাকা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম খুলশী এলাকার রূপসী পাহাড়। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়টির খাঁজে এবং পাদদেশে পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে অন্তত আটটি প্লট। রড-সিমেন্টের পিলার ও ইটের তিন-চার ফুট উঁচু দেয়াল তুলে ভাগ করা হয় প্লটগুলো। এক পাশ দিয়ে সুউচ্চ পাহাড়টির ওপর উঠে দেখা যায়, সেখানে সবজিখেত। আবার মাঝামাঝিতে থাকা পাহাড়ের টিলা কেটে সমান করা হচ্ছে।
পাহাড় কাটার দায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা অভিযান চালানোর পর বন্ধ ছিল কার্যক্রম। এখন আবার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে চৈতি সর্ববিদ্যা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এভাবে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এ ছাড়া পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। এ জন্য আমি পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি, তাদের পরিবেশ আইনে মামলা করার জন্য।’
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএস জরিপে এই জায়গা বাড়ি হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। আসকারদীঘির পূর্ব পাড়, জামালখান প্রেস ক্লাব, এসএস খালেদ রোড ও হেমসেন লেনের মধ্যবর্তী প্রায় আধা বর্গকিলোমিটার এলাকাটি একটি পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়ায় অনেক আগে একটি বাংলো ছিল, সেই হিসেবে হয়তো তা বাড়ি হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা বাড়ি শ্রেণির ভূমি নয়। ১৯৮৫ সালের দিকে দেশে বিএস জরিপের সময় তা বাড়ি হিসেবে রেকর্ড হয়েছে, যা রহমতগঞ্জ মৌজার ৭৮১ নম্বর খতিয়ানে উল্লেখ রয়েছে। পরে ১৬৯৪ নম্বর খতিয়ানেও তা বাড়ি হিসেবে নামজারি হয়েছে।
বাস্তবে যা পাহাড়, তা বাড়ি হিসেবে রেকর্ড হতে পারে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ এফ এম শামীম বলেন, ‘ভূমির রেকর্ডের ভিত্তিতে আমরা জমির নামজারি করে থাকি।’ পাহাড় যদি বাড়ি হিসেবে রেকর্ড থাকে, নামজারির সময় তা সংশোধন করা যায় কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য জমির মালিককে আবেদন করতে হবে। সরকারি সার্ভের সময় জমির শ্রেণি রেকর্ড করা হয়।’
এই সহকারী কমিশনার বলেন, ‘আমি নিজেও এই স্পটে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভূমির রেকর্ডের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
কিন্তু ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এবং ২০১০ সালের সংশোধিত আইনে পাহাড় বা টিলা বলতে বোঝায়, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাশর্^বর্তী সমতল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উঁচু মাটি অথবা মাটি ও পাথর অথবা মাটি ও কাঁকর অথবা অন্য কোনো কঠিন পদার্থ সমন্বয়ে গঠিত স্তূপ বা স্থান। আর সরকারি রেকর্ডপত্রে পাহাড় বা টিলা হিসেবে উল্লিখিত ভূমি।
এ জায়গাটি ২০২০ সালে প্রথম কাটার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছিলেন।
পাহাড় কাটার দায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা অভিযান চালানোর পর বন্ধ ছিল কার্যক্রম। এখন আবার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।এ বিষয়ে চৈতি সর্ববিদ্যা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এভাবে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এ ছাড়া পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। এ জন্য আমি পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি, তাদের পরিবেশ আইনে মামলা করার জন্য।’
তিন বহুতল ভবনের অনুমোদন কীভাবে : প্রতি ১৭তলার তিনটি ভবন নির্মাণের নগর উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন পায় ২০২০ সালের ৭ মার্চ, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুমোদন পায় ২০২২ সালের ১১ মে এবং বিশেষ প্রকল্পের ছাড়পত্র পায় ২০২৩ সালের ৫ মার্চ। সর্বশেষ ইমারত নির্মাণ কমিটির কাছ থেকে তিনটি বেইজমেন্ট ও ১৪তলা (পাহাড়ে বেইজমেন্ট হয় না, বাস্তবে তিনটি পার্কিং ফ্লোর ও ১৪তলা আবাসিক মোট ১৭তলা) ভবনের অনুমোদন নেওয়া হয় ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল। নগর উন্নয়ন কমিটি ৭টি, বিশেষ কমিটি ২৫টি, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র কমিটি ২২টি, ইমারত নির্মাণ কমিটি ৩২টি শর্ত দিয়েছিল ভবনগুলো নির্মাণে। যদিও চার কমিটির এই ৮৬ শর্তের অনেকগুলোরই একটির সঙ্গে আরেকটির মিল আছে।
২০১০ সালের সংশোধিত পরিবেশ আইনে পাহাড়কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে জাতীয় স্বার্থে সরকারের প্রয়োজনে অনুমোদন সাপেক্ষে পাহাড়কাটা যেতে পারে। তবে এরপর থেকে এ পর্যন্ত কোনো পাহাড়কাটার অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তর দেয়নি। অপরদিকে ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী, পাহাড়ে স্বল্প উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে পারলেও নগর উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন লাগবে। একই কথা বলা রয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ)। সেখানে জামালখান ও আসকারদীঘির পাহাড়ের কথা উল্লেখ করে সরাসরি বলা হয়েছে, স্বল্প উচ্চতার কম ঘনত্বের উচ্চবিত্তের আবাসন ভবনের অনুমোদন দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব, বিশেষ প্রকল্পের চেয়ারম্যান ও ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছি। এ ছাড়া নির্মাণকাজ শুরুর সময় থেকে সিডিএকে অবহিত করে এবং আমাদের প্রতিনিধির সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।’
তবে ভবন নির্মাণে কোনো শর্ত মানা হয়নি বলে তিনিও স্বীকার করেন। কাজী হাসান বলেন, ‘জমা দেওয়া কন্টুর ম্যাপ অনুযায়ী যে উচ্চতার পাহাড় ছিল, আমরা সম্প্রতি সাইট ভিজিটে গিয়ে সেই পাহাড় দেখতে পাইনি; অর্থাৎ তারা পাহাড় কেটেছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্তের বিষয়ে সংস্থাটির মহানগরের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘সিডিএ এভাবে আরেক সংস্থার ছাড়পত্রের শর্ত পাওয়া সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারে না। তারা অনুমোদন না দিলেই পারত। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পর তারা অনুমোদন দিলেই হতো।’
এ ছাড়া নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কৌশলে এই প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমরা নগর উন্নয়ন কমিটিতে এর অনুমোদন দিইনি। আমরা মিটিংয়ে বলেছিলাম, কন্টুর ম্যাপ জমা দিতে। সেই ম্যাপের ভিত্তিতে সাইট ভিজিট করে আলোচনা করে অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু পরে দেখি অনুমোদন দেওয়া হয়ে গেছে।’
একই কথা জানান সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে নগর উন্নয়ন কমিটিতে থাকা প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘এক মিটিংয়ে এ প্রকল্পটি উত্থাপনের পর আমরা কন্টুর ম্যাপ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র জমা দিতে বলেছিলাম। পরের মিটিংয়ে আশিক ইমরান ছিলেন না। আমি ওয়াশরুমে গেলাম। এই ফাঁকে এসে দেখি এই ফাইলটি আলোচনা হয়ে গেছে। পরে অনুমোদনপত্রও দেওয়া হয়।’
৯২ ফ্ল্যাটের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি : ২০০৮ সালে গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়া ড্যাপ অনুযায়ী সিডিএ ইমারত নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে থাকে। ড্যাপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কেউ নকশা জমা দিলে তা নগর উন্নয়ন কমিটির কাছে যায়। নগর উন্নয়ন কমিটি সবকিছু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেন। ড্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই এলাকায় বহুতল ভবন করার অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু পাহাড়টিতে ১৭তলার ৩টি টাওয়ারে ৯২টি ফ্ল্যাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতগুলো ফ্ল্যাটের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর উন্নয়ন কমিটির একাধিক সদস্য। নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘ড্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী এখানে কোনোভাবেই ৯২টি ফ্ল্যাটের অনুমোদন দেওয়া যায় না। আর আমরা নগর উন্নয়ন কমিটি থেকেও ৯২টি ফ্ল্যাটের কথা বলিনি। তাহলে কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষ প্রকল্প অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব ও সিডিএর সিনিয়র স্থপতি গোলাম রাব্বানী চৌধুরী বলেন, ‘কমিটির সবার উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে ৯২টি ফ্ল্যাট দেওয়ার অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে নগর পরিকল্পনাবিদও রয়েছেন।’
সিডিএর একাধিক প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ জানান, ২০০৮ সালের বিধিমালার আগে ওই পাহাড়ের চূড়ায় একটি ও নির্মাণের অনুমতি পাওয়া প্রকল্পের পাশে আরও একটি বহুতল ভবন হয়েছে। তখন বিধিমালায় এত কঠোরতা ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালের বিধিমালার পর এই পাহাড়ে কোনো ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
ভবনের স্থপতি-প্রকৌশলীর বক্তব্য : সিডিএর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী, প্রতিটি বহুতল ভবনের জন্য সিডিএর একজন নিবন্ধিত স্থপতি ও প্রকৌশলী থাকতে হয়। তাদের স্বাক্ষরিত নকশাই অনুমোদন করা হয়। এই নকশা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করবেন প্রকৌশলী ও স্থপতি। ভবনের নির্মাণকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্থপতি ও প্রকৌশলী নির্ধারিত ফরমে সিডিএকে অবহিত করবেন। এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতি বিজয় শংকর তালুকদার ও প্রকৌশলী অনুরূপ চৌধুরী। দেশ রূপান্তরের প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী অনুরূপ চৌধুরী বলেন, ‘সিডিএ আমাদের নকশা অনুমোদন দিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হবে। যদি বিধি অনুযায়ী না হতো তাহলে তো নগর উন্নয়ন কমিটি, বিশেষ কমিটি, ভূমি ব্যবহার কমিটি ও সর্বশেষ ইমারত নির্মাণ কমিটি থেকে অনুমোদনপত্র পেত না।’
কিন্তু দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থপতি বিজয় শংকর। তিনি বলেন, ‘আমার নকশায় ভবনের অনুমোদনের পর ভবনের মালিকপক্ষ আর আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। আমার নকশা অনুযায়ী এই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা অবগত না থাকায় দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি এবং সিডিএকেও চিঠি দিয়ে অবগত করেছি।’
উল্লেখ্য, অনেক হাতবদল হয়ে এই জমি স্বপ্নীল বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি সজল চৌধুরী, খোকন ধর, স্বপ্নীল বাংলাদেশের পরিচালক হিমেল দাশ, সুভাষ নাথ, রনজিত কুমার দে, রূপক সেনগুপ্তসহ ৯২ জনের হাতে এসেছে। শূন্য দশমিক ৫০৭৯ একরের এই জায়গা ১০ কোটি টাকায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কিনেছেন তারা।
জায়গাটি জামালখান এসএস খালেদ রোডে গ্রিন্ডল্যাজ ব্যাংকের পাহাড় বলে পরিচিত। ভবন নির্মাণের অনুমোদনের আবেদনের সময় জায়গার যে কন্টুর ম্যাপ (ভূমির অবস্থানগত উচ্চতা যে মানচিত্রে বোঝা যায়) জমা দিয়েছে, সেখানেও এই জায়গায় সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ১২৭ ফুট দেখানো হয়েছে। তাহলে পাহাড় নয় কীভাবে বলছেন এই প্রশ্নের জবাবে হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘জমির রেকর্ডে জমিটি বাড়ি শ্রেণিতে লিপিবদ্ধ। বাড়ি শ্রেণির জমিতে পাহাড় কাটার মামলা রেকর্ড হবে কীভাবে?’
কারণ দর্শানোর নোটিস : সিডিএর অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ না করায় কারণ জানাতে নোটিস দিয়ে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেছেন সংস্থার অথরাইজড অফিসার-২ তানজিব হোসেন। চিঠিতে বলা হয়, নির্মাণকাজ শুরুর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কিন্তু ছাড়পত্র না নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণসংশ্লিষ্ট আরও কিছু শর্তও ভঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কেটে পাহাড়ের অবয়ব পরিবর্তন করা হচ্ছে। শর্ত ভঙ্গের দায়ে কেন সিডিএর অনুমতিপত্র বাতিল করা হবে না জবাব দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।