
বুধবার থেকে শুক্রবার চীনের বেইজিংয়ে হয়ে গেল ১৩তম ওয়ার্ল্ড পিস ফোরাম। চীন ও বিশ্বের নানা দেশের প্রতিনিধিরা বিশ্বশান্তি বজায় রাখা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার পথ নিয়ে মতবিনিময় করেন। তারা বলেন, বৈশ্বিকীকরণের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে সম্মিলিতভাবে।
সাবেক মার্কিন দূত ও চীনা কূটনীতিক ছুই থিয়ানখাই বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশের জন্যই অভিন্ন ও সার্বজনীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যেসব দেশ নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে অন্যের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করছে—তারা শেষ পর্যন্ত সংকটে পড়বে এবং তাদের পথ আরও সংকীর্ণ হবে।’
মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান লিউ চিয়ানছাও বলেন, ‘১৯৪৫ সালে মানুষ যেমন শান্তির স্বপ্ন দেখেছিল, আজও তেমনই একটি কার্যকর বৈশ্বিক নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।’
উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হারম্যান ভ্যান রমপয় ট্যারিফ যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘শুল্ক যুদ্ধ পারস্পরিক আস্থার জন্য ক্ষতিকর। এটি যুক্তিসঙ্গত অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর গড়ে না উঠলে, কারও পক্ষেই লাভজনক হয় না।’
লিউর মতে, ‘চীন উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করতে চায় এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের জন্যও একই উন্নয়ন কামনা করে। কিন্তু এজন্য অবরোধ আরোপ বা দোষ চাপানো চলে না। এতে উভয়েরই ক্ষতি।’
ফোরামের মূল বক্তৃতায় জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউকিও হাতোইয়ামা পূর্ব এশীয় সহযোগিতা জোরদার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কূটনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের ওপর জোর দেন।
ফোরামে সাতবার অংশ নেওয়া এই চীন-বান্ধব রাজনীতিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন আগের অবস্থানে নেই। অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও তুলনামূলক অর্থনৈতিক দুর্বলতা তাদের নেতৃত্ব দুর্বল করেছে।’
তিনি পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্রুত ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং একটি উচ্চমানের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপর জোর দেন।
রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)-এর ভিত্তিতে এসব উদ্যোগ গড়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন হাতোইয়ামা।
এ ছাড়া, জাপানের আগ্রাসী অতীত নিয়ে আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি। তার মতে, ‘জাপানের ইতিহাসের এই অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে জাপান এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি।’
সূত্র: সিএমজি