ঈদের ছুটিতে সিনেমা হলে গিয়ে যেসব দর্শক এখনো পপকর্ন শেষ করতে পারেননি, তাদের মুখে মুখে একটাই নাম—‘দাগি’! শিহাব শাহীনের পরিচালনায় নির্মিত এই সিনেমাটা ঠিক যেন ঝালমুড়ি– ঝাল, টক, মিষ্টি—সব আছে! এখন তো এমন অবস্থা যে, এক মাল্টিপ্লেক্স ‘দাগি’ দেখাতে গিয়ে নিজেই “দাগি” হয়ে গেছে—কতবার যে শো বাড়িয়েছে!
তাহলে চলেন দেখি, কী কারণে সিনেমাপ্রেমীরা নিশোর দিকে তাকিয়ে বলছে, “ভাই, তুই একেবারে দাগ কেটে দিলি!”

গল্পটা একেবারে দেশি ঘরানার, মানে ডাল-ভাতের মতো পরিচিত!
এই সিনেমা দেখে মনে হবে, “আরে! এই কাহিনি তো পাশের পাড়ার রহিম ভাইয়ের!”
উত্তরবঙ্গের এক মফস্বল শহর, এক খুন, ১৪ বছরের জেল আর তারপর ফিরে আসা—গল্প শুনেই বোঝা যায়, একেবারে দাওয়াতি ড্রামা চলছে!
চরিত্রগুলোও যেন পাশের বাড়ির লোক—কে যে আসলেই অভিনয় করেছে আর কে যে সত্যিই দাগি, বোঝা দায়!
আর প্রেম, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, চোরাচালান—সব মিলিয়ে যেন দেশি রসনার একেবারে আদা-মরিচ দেওয়া তড়কা!
চিত্রনাট্য একেবারে লটকামি নয়—পুরাই মস্তান!
শুধু একটা গল্প না, এর মধ্যে আছে গুড টাচ-ব্যাড টাচ, পারিবারিক অসহিষ্ণুতা, আর জেন-জি/আলফা পোলাপাইনের ফোননির্ভর জীবনযাপন!
একেকটা সংলাপ শুনলে মনে হয়—“এইটা তো আমিই ভাবছিলাম!”
বিশেষ করে আফরান নিশো যখন বলে, “আল্লার দুনিয়ায় সব সুন্দর… ফুল সুন্দর… পাখি সুন্দর…”—তখন মনটা চায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে বব মার্লে গান গেয়ে উঠুক!
নিশো মানেই এখন যেন সিনেমার চৌকিদার—সে থাকলেই সব সেফ!
এই সিনেমা, এক কথায়, নিশোময়।
যেখানে তাকান, ওখানে আফরান নিশো।
‘সুড়ঙ্গ’-এর পর আবারও প্রমাণ করেছেন—ভাইয়ের অভিনয় মানেই মন জিতে নেওয়ার গ্যারান্টি!
১৪ বছর জেল খাটা এক যুবকের প্রেম, রাগ, দুঃখ—সব মিশিয়ে এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, মনে হবে পর্দার নিশো না, আপনার মেসের রুমমেট!
অভিনয়ের হাট বসেছে—নিশো একা নন, বাকিরাও জমিয়ে খেলেছেন!
তমা মির্জার অভিনয়ে একধরনের “অভিনয় পরিণতি” দেখা গেছে।
শুরুর জেরিন আর শেষের সংসারী জেরিন—দুটোকেই আলাদা করে মনে থাকবে।
আর সুনেরাহ তো একেবারে চুপ থেকে বাজিমাত!
চোখ দিয়েই যেন অর্ধেক স্ক্রিপ্ট বলে ফেলেছেন।
এদিকে শহীদুজ্জামান সেলিম সাহেব ‘রণজিৎ’ হয়ে হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে এমন চোরা চাহনি দিয়েছেন—দর্শকের শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে গেছে!
আর রাজীব সালেহীন, গাজী রাকায়েত, মনিরা আক্তার মিঠু—সবাই যেন একেকটা চেরি টপিং!
শিহাব শাহীন ভাই, আপনি তো সিনেমা বানাতে বানাতে কবি হয়ে গেছেন!
দীর্ঘ বিরতির পর পরিচালক একেবারে কামব্যাক ম্যাচ খেলেছেন!
চেনা গল্প, চেনা ফ্লেভার—তবুও নতুন লেগেছে।
অভিনয়, ক্যামেরা, আবহসংগীত—সব জায়গাতেই ছিল একদম বারিক যত্ন।
শেষমেশ এমন এক সিনেমা বানিয়েছেন, যেটা দেখে অনেকেই বলছে, “ভাই, ঈদের সেমাইয়ের পর যদি কিছু ভালো লেগে থাকে, সেটা ‘দাগি’!”
এই সিনেমা শুধু ‘দাগি’ না, একেবারে হৃদয়ে দাগ কেটে দেওয়া টাইপ!
তাই এখন হলে গিয়ে দেখুন, নাহলে পরে বলবেন—“আরে, ভাইরাল হওয়ার আগেই দেখলে ভালো হতো!”