Saturday, April 19
Shadow

চীনের চারটি খবর

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে মামলা করবে চীন

এপ্রিল ৯: যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘সমতুল্য শুল্কের’ ভিত্তিতে ৮ এপ্রিল চীনের পণ্যের উপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হ্য ইয়ং ছিয়ান বলেন, চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। আজ (বুধবার) বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে। অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা হুমকির প্রকৃতি তুলে ধরে। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে নিজের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক শৃঙ্খল দৃঢ়ভাবে বজায় রাখবে।

চীনের নির্মিত মধ্য-এশিয়ার বৃহত্তম বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু

সম্প্রতি, উজবেকিস্তানের বাশি এবং জাঙ্কেলদি বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। চায়না সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড কোং লিমিটেড (সিএসজি) প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ, নির্মাণ এবং পরিচালনার কাজ করেছে। প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস আগেই শেষ হয়, যা মধ্য এশিয়ায় নির্মিত বৃহত্তম বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্প।
বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বুখারা রাজ্যে অবস্থিত, যার বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ১.০২৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট।
উজবেকিস্তানের বাশি এবং জাঙ্কেরদি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রযুক্তিগত পরিচালক হুয়াং লে বলেন, পরিবর্তনশীল স্থানীয় জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য, প্রকল্পটিতে চীনের স্বাধীনভাবে তৈরি ৬.৫ মেগাওয়াট বৃহৎ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু টারবাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের বায়ু টারবাইন নকশা এবং কার্যকারিতায় অনেক উদ্ভাবন এবং অপ্টিমাইজেশনের মধ্য দিয়ে গেছে, যা বায়ু শক্তির সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতাকে ব্যাপকভাবে অপ্টিমাইজ করতে পারে এবং উচ্চদক্ষতা এবং স্থায়িত্ব অর্জন করতে পারে।

চায়না সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড ইন্টারন্যাশনাল হংকং কোম্পানির প্রধান বলেছেন যে, চীন-উজবেকিস্তান সম্পর্ককে নতুন যুগের সার্বক্ষণিক ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করার পটভূমিতে, জ্বালানি ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। চীন ও ইউক্রেনের নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য বাস্তবায়ন করা, চীন-ইউক্রেনের অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠনে সহায়তা করা এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের সবুজ শক্তির সহযোগিতা প্রচার করার জন্য এই প্রকল্পটি চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক পরিবর্তন করেছে চীন

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের শুল্ক কমিশন ‘যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন ও আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক ৩৪ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে পরিবর্তন করেছে। রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদনক্রমে আজ (বুধবার) প্রকাশিত এক ঘোষণাপত্রে কমিশন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল দুপুর ১২টা ১ মিনিট থেকে নতুন এ শুল্ক কার্যকর হবে।,
ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের ৮ই এপ্রিল মার্কিন সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া চীনা পণ্যের উপর ‘সমতুল্য শুল্ক’ ৩৪ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধির মার্কিন পদক্ষেপ একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত। এটি চীনের বৈধ অধিকার ও স্বার্থের গুরুতর লঙ্ঘন করে এবং নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে তার ভুল আচরণ সংশোধন করতে, চীনের বিরুদ্ধে সমস্ত একতরফা শুল্ক ব্যবস্থা বাতিল করতে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সমান সংলাপের মাধ্যমে চীনের সাথে মতবিরোধগুলো সঠিকভাবে সমাধান করার তাগিদ দেয়।

চীন সম্পর্কে জাপানের কৌশলগত বোঝাপড়া যাচাই করতে টোকিওর প্রতি বেইজিংয়ের তাগিদ

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন চিয়েন আজ (বুধবার) বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাপানের ‘ডিপ্লোম্যাটিক ব্লু বুক’-এর নতুন সংস্করণ চীনকে অভিযুক্ত ও কলঙ্কিত করার জন্য, তথাকথিত ‘চীনের হুমকিকে’ অতিরঞ্জিত করেছে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযৌক্তিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, চীন এর তীব্র বিরোধিতা করে।
মুখপাত্র আরো বলেন, চীন ও জাপান একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখা দুই দেশ এবং তাদের জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা জাপানকে, চীন ও জাপানের মধ্যে চারটি রাজনৈতিক দলিলের নীতি মেনে চলা, চীন সম্পর্কে তার কৌশলগত ধারণাকে সংশোধন করা, গোষ্ঠী সংঘর্ষের উস্কানি দেওয়া বন্ধ করা এবং চীন-জাপান কৌশলগত ও পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে প্রচার করার এবং নতুন যুগের প্রয়োজনীয়তা পূরণকারী একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল চীন-জাপান সম্পর্ক গড়ে তোলার মন্তব্য বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।
‌উল্লেখ্য, জাপান সরকার গতকাল (মঙ্গলবার) ‘ডিপ্লোম্যাটিক ব্লু বুক’এর ২০২৫ সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এতে চীন-জাপান সম্পর্ককে ‘জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং চীনের সাথে ‘কৌশলগত ও পারস্পরিক উপকারীমূলক সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে প্রচার এবং একটি গঠনমূলক ও স্থিতিশীল জাপান-চীন সম্পর্ক গড়ে তোলা’র প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, চীনকে এখনও ‘সবচেয়ে বড় অভূতপূর্ব কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখানো এবং পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি, চীন-রাশিয়ান সামরিক সহযোগিতা এবং চীনে জাপানিদের নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়কে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

চীনের স্থিতিশীল উন্নয়ন বর্তমান অস্থির বিশ্বে মূল্যবান স্থিতিশীলতা সঞ্চার করেছে: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন চিয়েন আজ (বুধবার) বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বহিরাগত ধাক্কা চীনের অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলোকে পরিবর্তন করতে পারে না, যার একটি স্থিতিশীল ভিত্তি, অনেক সুবিধা, শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা এবং দুর্দান্ত সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে উচ্চ-মানের উন্নয়নে চীনের দৃঢ় অগ্রগতির দৃঢ় প্রবণতা এবং নতুন মানের উৎপাদনশীলতার জোরালো বিকাশকেও পরিবর্তন করতে পারে না।

একতরফাবাদের উত্থানের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার উপর ছায়া ফেলেছে এবং কিছু দেশের শুল্কনীতি বিশ্বের উন্নয়নের অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের একটি শক্ত ভিত্তি এবং এগিয়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত গতি রয়েছে চীনের। চীনের বিভিন্ন ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস রয়েছে, কারণ আমাদের পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির শক্তিশালী নেতৃত্ব, চীনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য সুবিধা, বহু বছরের টেকসই ও দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমে সঞ্চিত দৃঢ় ভিত্তি, অতি-বৃহৎ বাজার এবং সম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা, আরো আছে ১.৪ বিলিয়ন চীনা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

লিন চিয়েন জোর দিয়ে বলেন যে, চীনের স্থিতিশীল উন্নয়ন বর্তমান অস্থির বিশ্বে মূল্যবান স্থিতিশীলতা সঞ্চার করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তা হিসেবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান বহু বছর ধরে প্রায় ৩০ শতাংশে রয়ে গেছে এবং সর্বদা বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পণ্য ভোগের বাজার হিসেবে, চীনে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যম আয়ের গোষ্ঠী। ক্রমাগত প্রসারিত ভোগ সম্ভাবনা ক্রমশ ‘চীনা চাহিদাকে’ ‘বিশ্ব সুযোগে’ রূপান্তরিত করবে।
লিন চিয়েন জোর দিয়ে বলেন যে, চীন প্রকৃত বহুপাক্ষিকতা বজায় রাখতে, সকল ধরণের একতরফাবাদ ও সুরক্ষাবাদের যৌথভাবে বিরোধিতা করতে, ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন বাস্তবায়নের জন্য সকল পক্ষের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *