Saturday, April 19
Shadow

কেন চিকেন’স নেকে নিরাপত্তা বাড়াল ভারত

চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পর চিকেন’স নেকে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ভারতের চিকেন’স নেক
চিকেন’স নেক

ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র স্থলপথটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি যা চিকেন’স নেক হিসেবে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের এই সংকীর্ণ ভূখণ্ড নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীনের সীমান্তবর্তী এলাকা।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্সকে ল্যান্ডলকড উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাদের সমুদ্রের ব্যবহারের ক্ষেত্রেই বাংলাদেশই একমাত্র অভিভাবক। আর এর পরপরই চিকেন’স নেক অঞ্চলে ব্যাপক ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী সিলিগুড়ি করিডোরকে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন বলে মনে করে এবং সম্ভাব্য হুমকির মোকাবিলায় উন্নত সামরিক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ত্রিশক্তি কোর; যার সদর দফতর শিলিগুড়ির নিকটবর্তী সুকনাতে অবস্থিত।

এই কোর অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত, যার মধ্যে রয়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র, এবং উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ‘চিকেনস নেক’ ভারতের জন্য কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অঞ্চল, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাহিনী দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব।

ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই অঞ্চলে একাধিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে বলে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

উন্নত সামরিক অস্ত্র : ভারতীয় বিমানবাহিনী হাসিমারা বিমানঘাঁটিতে রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যেখানে আগে থেকেই মিগ বিমান রয়েছে।

ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট : ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে, যা যেকোনো সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা : ভারতের অত্যাধুনিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম এই অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে শত্রুদের আকাশসীমা লঙ্ঘন প্রতিহত করা যায়।

এমআরএসএএম (এমআরএসএএম) এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : এগুলো আকাশসীমার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করে।

নিয়মিত সামরিক মহড়া : ত্রিশক্তি কোর নিয়মিত সামরিক অনুশীলন পরিচালনা করছে, যেখানে টি-৯০ ট্যাংকের মাধ্যমে লাইভ-ফায়ার ড্রিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়ায়।

কৌশলগত সতর্কতা
ভারত আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষত, এটি সিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারত তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করেছে। প্রতিরক্ষা প্রধান (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফর করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন ও উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক করেছেন, যা ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে আরো জোরদার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *