Site icon আজকের কাগজ

জবি ক্যাম্পাস ও থোরোমাইসিসি পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান

অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান

মোঃ রোকুনুজ্জামান, জবি প্রতিনিধি: ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০০৫, সংশোধিত ২০১৩ অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশের সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং বাইরে থোরোমাইসিসি পার্কসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানগুলোতে আশঙ্কাজনক ও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলছে শিক্ষার্থীদের ধূমপান। 

২০১০ সালের ৩১শে মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎ‎কালীন উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই বিষয়টি পুনরায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আসায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) জবি ইউনিটের আয়োজনে ধূমপানবিরোধী র‌্যালির ফলে তৎকালীন উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। অনেকের মতে ছাত্রলীগের প্রভাবে তিনি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। 

অতঃপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপান ও তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে ২০২২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এন্টি টোব্যাকো ক্লাব-এর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ও নজরদারির অভাবে জবির সাজিদ ভবনের নিচ তলায়, পগোজ স্কুলের গলি, চারুকলা অনুষদের নিচতলা (ব্যাংকের সামনে), কলা ভবনের রেভেনাস প্লাস কেন্টিনের পাশে, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের পাশে, শিক্ষার্থী ঘোষিত টিএসসি ও থোরোমাইসিসি পার্কে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের জায়গায় প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন ধূমপায়ীরা। 

এতে করে একদিকে যেমন অধূমপায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেশিরভাগ নারী শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ ধূমপান করার সময় পাশে থাকা অধূমপায়ীরাও সমান ক্ষতির সম্মুখীন হন।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এন্টি টোব্যাকো ক্লাবের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, “ট্যোবাকো এ্যাটলাস ২০২০ এর তথ্যানুসারে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কতৃক প্রকাশিত ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী উক্ত অর্থবছরে তামাক ব্যবহারজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিলো ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে দেশে তামাক ব্যবহারের এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

তিনি আরও বলেন,”‎শিক্ষার্থীদের ওপর ধুমপানের প্রভাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি তাদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। ধূমপান ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায় এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। এটি মানসিক স্বাস্থোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যেমন: উদ্বেগ ও বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়। ধুমপান শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা এবং স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয়, যা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। ধুমপান শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, এবং সামাজিক জীবনে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও ধূমপান মুক্ত নয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যথাসম্ভব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জন-সচতেনতা সৃষ্টি এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করবে।”

এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক কে. এ. এম. রিফাত হাসান বলেন, “পাবলিক প্লেসে যেহেতু ধূমপান আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ২০১০ সালেই জবিকে ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেহেতু ক্যাম্পাসের ভিতরে এরকম কার্যকলাপে আমরা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বাইরেও যেন শিক্ষার্থীরা ধূমপান না করে সেজন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেকে আমরা জণ-সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানাবো। আর ক্যাম্পাসের ভিতরে ধূমপানকে নিষিদ্ধ করার ঘোষনাটি পুণরায় নোটিশ আকারে প্রকাশ করে সকলকে অবগত করার জন্য আমরা যথাসম্ভব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমি নিজেও ধূমপান করিনা। তাই আইন ভঙ্গ করে কেউ এরকম কাজ করলে আমি নিজেও তার উপর ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। আমাদের ক্যাম্পাসকে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দ্রুত বসবো এবং যদি দেখা যায় এটা কোনো অধিকারের আওতাভুক্ত তাহলে আমরা নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করে দিব। কিন্তু অতি দ্রুত ক্যাম্পাসকে ধূমপানমুক্ত করতে পারলে আমি নিজেও খুশি হবো।”

Exit mobile version