চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও গবেষণা বলছে—খাবার ও অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তনেই দূরে রাখা যাবে ঝুঁকি
কোরবানির ঈদ মানেই উৎসবের আনন্দে রসনা তৃপ্তি। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী কয়েকদিন ধরে ঘরে ঘরে চলে নানা রকম গরু ও খাসির মাংসের পদ। কাবাব, রোস্ট, ঝোল, ভুনা—বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু রান্না দিয়ে ভরপুর থাকে খাবারের টেবিল। তবে এই অতিরিক্ত মাংস খাওয়া শরীরের ওপর ফেলে বড় ধকল। বিশেষ করে গরুর মাংস বেশি খাওয়া গেলে দেখা দিতে পারে হজমজনিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বাড়া, লিভার ও কিডনির ওপর চাপ, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরুর মাংসে রয়েছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও প্রোটিন। এসব উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে টক্সিন তৈরি হয়, হজমে সমস্যা হয় এবং লিভার-কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিওলজি’-তে প্রকাশিত একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেড মিট বা লাল মাংস (যেমন: গরু, খাসি) অতিরিক্ত খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি মাংসে থাকা ‘হেম আয়রন’ শরীরে জমে গিয়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে, যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, ঈদের পরের ৭-১০ দিন যদি কিছু নিয়ম মানা যায়, তাহলে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। নিচে থাকছে কিছু কার্যকর পরামর্শ—
১. মাংস খেলে হজমে সহায়ক এমন খাবার খাওয়া জরুরি। যেমন—লাউ, মিষ্টিকুমড়া, পালং শাক, করলা, ঢেঁড়স, পেঁপে ইত্যাদি। এগুলোতে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে।
২. দেহে জমে থাকা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ও টক্সিন দূর করতে দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন।
৩. কাবাব, গ্রিল, হাড়ি কাবাব, রেডি-মেড প্রসেসড মিট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম ও প্রিজারভেটিভ থাকে। এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৪. ঈদের ছুটিতে অনেকে অলস সময় কাটান। কিন্তু অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে এবং খাবার হজমে সহায়তা করে।
৫. ঈদের পর অন্তত ২-৩ দিন মাংস খাওয়া বিরতি দিন। এর বদলে ডাল, সবজি, ফলমূল ও সহজপাচ্য খাবার খান।
৬. ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিরা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যান এবং নিয়মিত ওষুধ ও পরীক্ষাগুলো চালিয়ে যান।
৭. চা, কফি ও কোমল পানীয় পান করলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয় এবং হজমের সমস্যা বাড়ে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- যাদের গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি আছে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, যাদের কিডনি ও লিভারে সমস্যা, যাদের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে। তাদের জন্য বেশি মাংস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
ঈদের আনন্দে শরীর যেন অসুস্থ না হয়ে পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা সবার দায়িত্ব। একটু সচেতনতা, কিছু নিয়ম মেনে চলা এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ঈদের পর সুস্থ থাকা নিশ্চিত করা সম্ভব।