একেএম নাজমুল আলম : প্রাকৃতিক চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত এক শক্তিশালী ঔষধি গাছের নাম অশ্বগন্ধা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যার নাম “রসায়ন”। কারণ, এটি শরীরের কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকের কাছেই এই গাছটি এখনো অজানা। অথচ অশ্বগন্ধা গাছের শেকড়, পাতা ও ফল আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও মূল্যবান ওষুধে পরিণত হয়েছে।
গাছের পরিচিতি বৈজ্ঞানিক নাম: Withania somnifera স্থানীয় নাম: অশ্বগন্ধা গোত্র: Solanaceae
উচ্চতায় গাছটি সাধারণত ২ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়।
এর শিকড় থেকে আসে এক ধরনের ঘ্রাণ, যা অনেকটা ঘোড়ার মতো—সেখান থেকেই এসেছে নাম: অশ্ব (ঘোড়া) + গন্ধা (গন্ধ)।
অজানা তথ্য: অশ্বগন্ধাকে বলা হয় “ভারতীয় জিনসেং” – কারণ এটি শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়।
এটি একটি অ্যাডাপটোজেনিক গাছ, অর্থাৎ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
গবেষণা বলছে, অশ্বগন্ধা শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন কমায়।
গাছটির শেকড় থেকে তৈরি চূর্ণ বা ক্যাপসুল এখন বিশ্বজুড়ে বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে!
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস:
অশ্বগন্ধা নিয়মিত সেবনে টেনশন, ইনসোমনিয়া এবং অবসাদ কমে যায়। এটি মনকে শান্ত রাখে।
২. যৌনক্ষমতা ও প্রজননশক্তি বৃদ্ধি:
পুরুষ ও নারীদের যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অশ্বগন্ধার নির্যাস কার্যকর। শুক্রাণু বৃদ্ধি, শক্তি বৃদ্ধি এবং হরমোন ব্যালেন্সে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩. স্মৃতিশক্তি ও ব্রেন ফাংশন উন্নত করে:
স্টুডেন্ট বা বয়স্কদের জন্য এটি খুব উপকারী। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করে।
৪. শরীরের শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
অশ্বগন্ধা দেহে এনার্জি বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৫. রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে:
এটি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৬. বাত, জয়েন্ট ব্যথা ও ইনফ্ল্যামেশন কমায়:
অশ্বগন্ধা শরীরের ফোলাভাব ও ব্যথা প্রশমনে কার্যকর।
অশ্বগন্ধা গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই গাছের পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে।
মাটিতে পানি জমে না থাকলে এটি সহজেই বেড়ে ওঠে এবং লাভজনক চাষও হতে পারে।
# গর্ভবতী মহিলাদের এটি না খাওয়াই ভালো।
# ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের আগে অভিজ্ঞ ভেষজ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অশ্বগন্ধা একটি গাছ হলেও এর গুণাগুণ একাধিক আধুনিক ওষুধের সমান। শরীর ও মনের যত্নে, রোগ প্রতিরোধে ও জীবনশক্তি বাড়াতে অশ্বগন্ধার বিকল্প খুবই কম। বাংলাদেশে এই গাছের চাষ ও ব্যবহার বাড়ানো গেলে তা হতে পারে প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য বিপ্লবের পথপ্রদর্শক।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অশ্বগন্ধার চাষ, গবেষণা ও ঔষধি ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।