শুভজিৎ ভৌমিক
(১) এই একটামাত্র দুর্ঘটনাতে – যে ইনসেইন লেভেলের কালেকটিভ স্টুপিডিটি আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখলাম, বাঙালি হিসাবে এইটা আমার দীর্ঘদিন মনে থাকবে। বিমান দুর্ঘটনা হলো। বাচ্চাগুলো মারা গেলো। এইরকম মুহুর্তে আপনার দায়িত্ব কী? এবসলিউটলি কিচ্ছু না। আপনি জাস্ট শোক প্রকাশ করতে পারেন। চিন্তা করতে পারেন। দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে পারেন।
(২) কিন্তু, ঘটনা ঘটে সারে নাই, তার আগেই – সোশ্যাল মিডিয়াতে দশ হাত লম্বা মতামত প্রকাশ করে ক্যাওয়াস তৈরি করা আপনার কাজ নারে ভাই। কোনো রেস্পন্সিবল মানুষ এই আকামটা করবেনা। এইজন্য খেয়াল করেনঃ রেসপন্সিবল ফেসবুকার হিসাবে আপনারা যাদের চেনেন, তাদের মধ্যে কেউই এই দুর্ঘটনা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো মতামত এখনও দেন নাই। কেন দেন নাই? কারণ এখানে কোনো মতামত দেয়া সম্ভবই না। একটা একটা করে টপিক ধরলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
(৩) প্লেন এক্সিডেন্টের ক্ষেত্রে, প্রোপার এবং ইন ডিটেইল ইনভেস্টিগেশন ছাড়াঃ ভগবানের পক্ষেও রায় দেয়া সম্ভব না যে – আসলে প্রবলেমটা কী হয়েছিলো। অনেক সময় তদন্ত করেও কিচ্ছু পাওয়া যায়না। ব্যাপারটা প্রচণ্ড জটিল। মাসের পর মাস, এমনকি বছর লেগে যায় এইধরনের তদন্ত করতে। অথচ, আমাদের ফেসবুক বিজ্ঞানীরা – এক্কেবারে চোখ বন্ধ করেঃ কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ প্লেনের দোষ দিলেন। কেউ পাইলটের দোষ দিলেন। কেউ বিমানবাহিনীর দোষ দিলেন। মিলিটারির প্লেন ঢাকায় কেন প্রশিক্ষণ নিবে? এয়ারস্পেইসের এতো কাছে বিল্ডিং বানানোর পারমিশন কে দিলো? চাইনিজ, চেংদু, দুর্নীতি থেকে শুরু করে কেন পাইলটকে হিরো বানানো হবে? মানে, দিস্তার পর দিস্তা প্রশ্ন। ক্যাওয়াসের একশেষ।
(৪) একটাবার মনে হইলো না যে, এই প্রশ্নগুলা করার সময় – এখন না? পরিস্থিতি শান্ত হতে দেন। এরপর করেন প্রশ্নগুলো? তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে শোকের বদলে জ্বালাময়ী প্রশ্ন করাকে আপনি জাতীয় দায়িত্ব ভেবে নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। আমি এইটা ক্লিয়ারলি বুঝি যেঃ এই দেশের মানুষ – দেশের অপারেটিং সিস্টেমের সামগ্রিক অক্ষমতা সম্পর্কে জানে। এইজন্য দুর্যোগ দেখলে, অনেকেই নিজের দায়িত্বে সাহায্যের হাত বাড়াতে ছুটে যায়। এই “নিজে দায়িত্ব নেয়ার” আপ্রাণ চেষ্টা – দিনশেষে আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকেই প্রমাণ করে। বহু জায়গা আছে, যেখানে আপনি যদি কিচ্ছু না করে চুপচাপ বসে থাকেন, তাহলেই সবচেয়ে বেশি উপকার হবে। কিন্তু না! বাঙালি নন্দলাল উহা মানিবে না। স্বদেশের তরে – যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
(৫) প্রাথমিক ধাক্কার পর আওয়াজ উঠলোঃ প্রচুর নাকি রক্ত প্রয়োজন। বিন্দুমাত্র ভাবলো না কেউ, তার আগেই হাসপাতাল সয়লাব হয়ে গেলো মানুষে। রক্তদান মহৎ কাজ। যারা গেছেন, তারা ভালো বুঝেই গেছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, মানুষ এখনও জানেনা – প্রত্যেকটা হাসপাতালের একটা নিজস্ব ব্লাড কালেকশন নেটওয়ার্ক আছে। বহু সংস্থা এবং ভলান্টিয়ার এগুলোর সাথে জড়িত। যতো বড় দুর্ঘটনাই হোক, ব্লাড পাওয়া যাবেই। বাচ্চাদের ব্লাড লাগলে তাদের ফ্যামিলি আছে। শুধুমাত্র, খুব দুর্লভ গ্রুপের ব্লাড ডোনার ছাড়া – কারোই আসলে হাসপাতালে যাওয়ার কোনো দরকার ছিলোনা। ইনফেকশাস জায়গাতে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারোই যাওয়া উচিত না। ভিড় করার তো প্রশ্নই আসেনা।
(৬) অথচ দেখা গেলোঃ দলবল নিয়ে জামাতের আমীর এবং বিএনপির মির্জা আলমগীর হাসপাতালে চলে গেছেন। এরা হচ্ছে আপনাদের নেতা? ওয়াও! আগামীবার ভোট দেয়ার আগেঃ ক্রাইসিস মোমেন্টে ওনাদের এই স্টুপিডিটি মাথায় রাখবেন। উৎসুক জনতা, ছাপড়ি ইউটিউবার এবং অনলাইনের লাইভ স্ট্রিমারদের কথা আর বললাম না। মানে, দুর্যোগের মুহুর্তে – দুনিয়া থেকে এই শ্রেণীটাকে যদি জাস্ট ভ্যানিশ করে দেয়া সম্ভব হতো, তাহলে শালার মানবতা শান্তি পেতো। বিশাল এই উন্মাদ ক্রাউডকে আর্মি কন্ট্রোল করতে পারে নাই। স্বাভাবিকভাবেই – বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এইটা অবশ্যই আর্মির ফেইলিওর, কিন্তু বোকাচোদা জনগণের দায়ও কম না। স্বীকার করেন। এটা সত্যি।
(৭) এরপর শুরু হলো গুজবের বন্যা। লাশ নাকি গায়েব করা হচ্ছে। একদল স্টুপিড বিবৃতি দিয়ে দিলোঃ আমরা নিজে হাতে একশো লাশ বাইর করছি, অথচ আর্মি বলতেছে পঁচিশটা। আর্মি বলতেছে? সিরিয়াসলি? আর্মির কে বলতেছে? সে বলার কে? একেকটা সৈনিক একেকটা সাইডে কাজ করছে। এইটা অন্ধের হাতি দর্শনের মতো ব্যাপার। নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী – একেকজন একেক ফিগার দিবে, তাই তো স্বাভাবিক। অনেক সময় জনতাকে টেম্পোরারিলি শান্ত রাখতেও ডেথ কাউন্ট “সাময়িকভাবে” কমিয়ে বলার প্র্যাকটিস আছে।
(৮) মোদ্দা আলাপ হচ্ছেঃ ইনভেস্টিগেশনের আগে টোটাল ডেথ কাউন্ট বলাই সম্ভব না। গ্যাসোলিনের মারাত্মক তাপে কতো লাশ সিমপ্লি ধোঁয়া হয়ে গেছে। কতো শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। হাত একদিকে, মাথা একদিকে, পা একদিকে। এগুলোকে একাট্টা করে ফরেনসিক না করলে – ভগবানের পক্ষেও কোনো রিপোর্ট দেয়া সম্ভব না। অথচ, ফেসবুকে দাবি উঠে গেছেঃ আমরা প্রকৃত মৃতের সংখ্যা জানতে চাই। কেন? এক্ষণই, এই মুহুর্তে – এই সংখ্যাটা জেনে কী হবে? যে কোনো দাবি তোলার আগে, সেই দাবি পূরণ হলে “কী হবে” – এইটার খুব পোক্ত উত্তর নিজেদের কাছে তৈরি রাখবেন, প্লিজ। এহে, এই পোস্টে তো সূক্ষ্মভাবে আর্মির গুণগান গেয়ে ফেলা হচ্ছে! আসেন, একটু গালিগালাজ দেন।
(৯) এরপরে “এনোনিমাস” নামের ভুয়া একটা জুয়াড়ি ফেসবুক পেইজ বের হলো। আলবাল প্রেডিকশন দিয়ে ভরা একটা ভুয়া গ্রুপ, যাদের কাজই হচ্ছেঃ আজকে একটা বিল্ডিং ধ্বসে পড়বে। কালকে প্রচুর মানুষ মারা যাবে – এইধরনের ব্লাফ ছাড়া। অথচ, কোথায় এইসব ঘটনা ঘটবে – কিছুই কিন্তু বলা নাই সেই পেইজে। বাঙালির হাহাকারের চোদনে – পরে সেই পেইজও উধাও হয়ে গেলো। কিন্তু, হালে পানি পেয়ে গেলো আমাদের কলকাতা পলাতক আওয়ামী পাণ্ডারা। এইবার ইউসুফের সরকার শ্যাষ। আমেরিকার বাঙ্গি ফাইটা গেছে। চোখের সামনে “পোমান” হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।
(১০) মানে, নির্লজ্জতার শেষ সীমাটুকুও অতিক্রম করে ফেললো আওয়ামী লীগের লোকজন। মাইলস্টোনের পোলাপান জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলো। জাস্ট এই কারণে, এতোগুলো নীরিহ বাচ্চার মৃত্যুকে – জাস্ট একটা তামাশার ব্যাপার বানিয়ে ফেললো এই মাদারচোদের দল। “খুব ভালো হইছে। উচিৎ শিক্ষা হইছে। স্বজন হারানোর ব্যাথা বোঝো এইবার” – এই জাতীয় পোস্ট আমরা আওয়ামীদের তরফ থেকে দেখেছি। একবার ভাবেন। নয় বছরের বাচ্চা মারা যাওয়ার পরে – আপনি চোখের সামনে স্বগোত্রীয় একটা মানুষকে এইসব বলতে দেখছেন। কেমন লাগবে আপনার? মানে, এদের ব্যাপারে একটা শব্দ খরচ করারও কি রুচি হবে?
(১১) ইন্টেরিমের প্রতিটা ব্যর্থতা, আওয়ামী লীগ খুব ভালোভাবে এনক্যাশ করেছে। করারই কথা। তাদের আপাই যে ভালো ছিলো, প্রত্যেক মুহুর্তে সেটা এরা এই জাতিকে বুঝিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা বাকী রাখেনি। কিন্তু, তার মাত্রা যে এতো নির্লজ্জ হতে পারে, এটা কেউ কল্পনাও করেনি। এই কফিনে ফাইনাল পেরেক মেরে দিলোঃ আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেইজ। নিতান্ত বোকাচোদার মতো – মৃতদের পরিবারের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং-এর পোস্ট আসতে দেখলাম আমরা সেখান থেকে। জনরোষের মুখে সেটা ডিলিটও হয়ে গেলো। এরপর মৃতদের কবরস্থানের জন্য জায়গার বরাদ্দ দেয়া হলো।
(১২) উদ্দেশ্য খারাপ ছিলোনা এদের। একই ঘটনায়, একইসাথে মারা যাওয়া মানুষের পরিবাররা যাতে কাছাকাছি আসতে পারে – ওদের টার্গেট ছিলো এইটা। যাতে আগামী দিনে এই জায়গায় এসে এইসব হতভাগা পরিবার নিজেদের মধ্যে দুঃখ-শোক ভাগাভাগি করে নিতে পারে। একই পারপাসে, একই যুদ্ধে মারা যাওয়া সৈনিকদের জন্য বরাদ্দ কবরস্থান – দুনিয়ার অনেক জায়গাতেই আছে। কিন্তু, এদের আইডিয়া কমপ্লিটলি ব্যাক ফায়ার করলো। এইটাই হচ্ছেঃ রাজনীতি না জেনে ময়দানে নেমে পড়ার ফলাফল। পাবলিক পালস ইন্টেরিম সরকার ধরতেই পারে নাই। মানুষ ইন্টারপ্রেট করলো যেঃ এই বরাদ্দ না পেলে কি বাচ্চাগুলোর কবর হতোনা? রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মৃত পাইলটের জানাজা হলো। অথচ অন্যান্য মৃতদের জন্য, এতোগুলো নীরিহ বাচ্চার জন্য – শুয়োরের বাচ্চাদের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলোনা।
(১৩) ডিফেন্সের কোনো হাই-অফিশিয়াল, কোনো উপদেষ্টা, কোনো হাই-প্রোফাইল লোকঃ যার ওপরে জাতি ভরসা রাখতে পারে, এতো বড় শোকের মুহুর্তেঃ জাতিকে এড্রেস করে কেউ কোনো বক্তব্য দিলোনা। কেউ কোনো জানাজায় গেলোনা। বলির পাঁঠা হিসাবে মাইলস্টোনে পাঠানো হলো আসিফ নজরুলের মতো উজবুককে, যাকে মোটাদাগে বহু মানুষ অত্যন্ত অপছন্দ করে। বিশাল ভুল সিদ্ধান্ত। নেতা হাত তুললে জনগণ শান্ত হয়ে শুনবে। নেতা হাত তুললে ক্রাউড কমপ্লিট কন্ট্রোলে থাকবে – এটাই হচ্ছে নেতার বৈশিষ্ট্য। লিডারশিপ। স্বাভাবিকভাবেই, এতোগুলো ব্লান্ডার করার পর – আসিফ নজরুলের মতো ইনকম্পিটেন্ট লোক গিয়েঃ এই বিশাল জনরোষের ধাক্কা সামলাতে পারলো না।
(১৪) মানে, যতোভাবে ভুল করা সম্ভব। এইরকম শোকাবহ ক্রাইসিস মোমেন্টে এই ইন্টেরিম সরকারের সবাই, একেবারে তালিকা ধরেঃ গুণে গুণে, দায়িত্ব সহকারে প্রতিটা ভুল জায়গায় টিকচিহ্ন দিয়ে দিলো। এবং, এই ইন্টেরিমের কবরে ফাইনাল পেরেক মারা হয়ে গেলো। কী ওভার হোয়েলমিং স্টুপিডিটি! সবাই মিলে, একটা জাতির প্রতিটা সদস্যের নির্বোধ চিন্তাধারা – কীভাবে একটা ডিজাস্টারাস এনার্কি তৈরি করতে পারে, এই বিমান দুর্ঘটনা তার টেক্সটবুক এক্সাম্পল হিসাবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। আর কেউ মনে না রাখুক, ইউনূস সাহেব অন্তত বাকী জীবন এই ডিজাস্টার মনে রাখবেন – এটা আমার বিশ্বাস।
(১৫) আওয়ামী পাণ্ডাদের মোটা মাথায় একটা জিনিস জীবনেও ঢুকবে না, সেটা হচ্ছেঃ আমরা যারা জুলাই আন্দোলনের পক্ষের লোক, সবাই কিন্তু ইউনূস সরকারের ইন্টেরিমে ঈমান আনি নাই। পক্ষে থাকা তো দূরের ব্যাপার। পলিটিক্যাল নিউট্রালিটি কী জিনিস, সেটা এদের মোটা বুদ্ধিতে কুলাবে না।
(১৬) বছরের হাসিনা রেজিম – বাংলাদেশকে যে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফেলে পালিয়ে গেছেঃ নিতান্ত ম্যাজিকাল কিছু না হলে – ভগবানের পক্ষেও এই দেশকে আগামী ১০ বছরে মেরামত করা সম্ভব না। এই বিবেচনায়, এই ইন্টেরিমকে – আমরা যথাসাধ্য ছাড় দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার তাড়ানোর আফটার-ইফেক্ট হিসাবে আসাঃ এই অল্প সদস্যের কমজোরি ইন্টেরিম, তাদের সীমিত সামর্থ্য বিবেচনায় যথেষ্ট ছাড় পেয়েছে।
(১৭) আমি এই মুহুর্ত থেকেঃ ইন্টেরিমের ওপর থেকে আমার টেম্পোরারি আস্থার জায়গাটা উঠিয়ে নিলাম। আওয়ামী পাণ্ডারা দয়া করে নাচবেন না। “দেখুন লাল বদরের কান্না” শিরোনামে স্ট্যাটাসও চোদাবেন না। বাংলাদেশের এই ডিসফাংশনাল অবস্থার জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী। এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই নাই। না শেখ হাসিনা পালায়। না দেশের এই অবস্থা হয়। অল্টারনেটিভ হিসাবে আমরা যা পেয়েছি – এইটা যথেষ্ট না, বহুভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দেশের আইন-কানুন রক্ষায় এই ইন্টেরিম সম্পূর্ণভাবে ফেইলিওর। কাজেই, এই কমজোরি, দুর্বল ইন্টেরিমকে আর টেনে নেয়ার কোনো অর্থ নাই। ইন্টেরিমের দোষ নাই। হাসিনার ১৬ বছরের পায়খানা – ওনারা এক বছরে ক্লিয়ার করতে পারেন নাই, এইটা অক্ষমতা হতে পারে। তবে দোষ না। ওনারা ঠেকার কাজ চালাতে এসেছিলেন। হয়ে গেছে। এখন আপনারা আসতে পারেন।
(১৮) একটা দেশকে অপারেট করতে – নির্বাচিত সরকারই দরকার। সেজন্য, যতো দ্রুত পারেন, নির্বাচন দিয়ে আপনারা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। আপনারা এক বছর সময় পেয়েছেন। যথেষ্ট হয়েছে। এখন বাসায় ফিরে যান। নতুন যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও হয়তো কিছুই পারবে না। তবে জাতি হিসাবে আমরা এইটুকু শান্তি অন্তত পাবো যেঃ আমরা যা করেছি, নিজেদের বিবেচনায় করেছি। নিজেরা ভোট দিয়ে করেছি। আমরা এটারই যোগ্য। কাজেই, এটাই আমাদের প্রাপ্য।
(১৯) লেখা এখানেই শেষ। যাওয়ার আগে, স্বার্থপরের মতো কয়টা কথা বলি। মাফ করে দিয়েন, গালি-গালাজ দিয়েন। কিন্তু এটাই রিয়েলিটি। যদি যোগ্যতা, ক্ষমতা, বা টাকা-পয়সা, লাইনঘাট ইত্যাদি জানা থাকেঃ যে কোনোভাবে বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে চলে যান। যেখানে ইচ্ছা যান, কিন্তু জাস্ট চলে যান। একটা দেশের দীর্ঘতম স্বৈরাচার হাসিনা, যার নির্দেশে সবকিছু চলেঃ সে যখন তার ছেলেকে দেশের বাইরে আমেরিকা পাঠায় দেয়, তখন সেই দেশের ভবিষ্যত আপনি ইজিলি বুঝে যাবেন। বাংলাদেশের রাজপুত্রও বাংলাদেশে থাকতে চায়না। তো, আপনি কোন হ্যাডা? আপনি কি রাজপুত্রের চেয়ে বড়? কাজেই, আপনার দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ ত্যাগ করা। বাংলা হিসাব।
(২০) আপনি লিখে রাখেন, সার্বজনীন বোকাচোদার এই দেশে – আপনি বেঁচে থাকা অবস্থায়, আর কিছু হবেনা। কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না। মূল্যবান জীবনটা যদি কামলা খেটেও হয়, অন্য দেশে ব্যয় করেন। বিশ্বাস করেন, আমি ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে এসেছি। একটা মুহুর্তের জন্য আমার বাংলাদেশে ফেরার ইচ্ছা জাগেনি। এতোই অথর্ব এই দেশ, যার পুরা একটা রাজনৈতিক দল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পৃথিবীতে এইরকম বহু সভ্যতা, তাদের কালেক্টিভ স্টুপিডিটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। মাটি খুঁড়ে আজকাল তাদের ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশও সেইরকমই হবে। কাজেই, আপনিও পালান। যেভাবে পারেন, পালান এখান থেকে। নিজেকে নিরাপদ রাখেন। বাচ্চাকে নিরাপদ রাখেন। পালান, ভাই এখান থেকে।
(২১) অন্তত, আপনার বাচ্চা পোড়া শরীর নিয়ে রাস্তা দিয়ে সাহায্যের জন্য হাঁটবে না। কোনো মাদারচোদ এই জিনিসের ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছাড়বে না – এই গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি। চোখে দেখা যায়নারে ভাই এই দৃশ্য। একটা পুড়ে যাওয়া বাচ্চা হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, আর মানুষ ভিডিও করছে? এই বোকাচোদা অমানুষের দেশে – কেন থাকবেন ভাই আপনি? কোনো মানে হয়? যে বাচ্চাগুলো মরে গেলোঃ We are sorry, little angels. You fought, and you won. আমরা পারলাম নারে। যদি পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় কুলায়, ভগবানের মতো নিষ্পাপ এই বাচ্চাগুলো যাতে জাতিগতভাবে আমাদের এই জঘন্য ব্যর্থতা ক্ষমা করে দেয়।
(২২) কোথায় লুকাবেন আপনি এই পাপ? এতোগুলো বাচ্চাকে পুড়িয়ে মারার পাপ? আহারে বাচ্চাগুলা। আহারে। মাফ করে দিসরে, সোনা মানিকরে আমার। আমরা অক্ষম। আমরা কিচ্ছু করতে পারি নাই. আমাদের মাফ করে দিস। এই পাপের ভাগ হিসাবে, তোদের পুড়ে যাওয়া চামড়ার অভিশাপ যাতে আমাদের গায়েও লাগে। জাতি হিসাবে, আমরা যাতে তোদের অভিশাপ নিয়ে পুড়তে পুড়তে ধ্বংস হয়ে যাই।একদিন এই বাচ্চাদের সাথে আমাদের দেখা হবে। কী উত্তর দিবো আমরা এই পাপের? এতো আনন্দ আয়োজন, সবই বৃথা ওদের ছাড়া।