Site icon আজকের কাগজ

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও  কাজ শুরু হয়নি যশোরের বসুন্দিয়া-বাঘারপাড়া সংযোগকারী ভৈরব সেতুর

ভৈরব সেতু

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর :  যশোরের বসুন্দিয়া – বাঘারপাড়া সংযোগকারী ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী শেষ হলেও এখনও কাজ শুরু করা হয়নি। 

দুই বছর আগে নতুন করে নির্মাণের জন্য যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ও বাঘারপাড়া উপজেলাকে সংযুক্তকারী ভৈরব সেতুটি ভাঙা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৭ আগষ্ট কাজ শুরুর তারিখ নির্ধারণ থাকলেও নকশা জটিলতায় আটকে যায় নির্মাণ কাজ। ১০ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ফলে লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর অধিন ”প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রীজ” প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক আর্থায়নকারী সংস্থার মাধ্যমে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ৪১৩ টাকা ব্যায়ে ৮১ মিটার দৈর্ঘ ব্রীজের নির্মাণ কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম ডি মঈনউদ্দীন (বাঁশী)। কাজটি শেষ করার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা দেওয়া ছিল ২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও নকশা জটিলতার কারণে আজও কাজ শুরু করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শুরুতে ভেঙে ফেলা হয় সংযোগ সেতুটি। সে সময় থেকে নকশা জটিলতায় আটকে আছে নির্মাণ কাজ। নতুন নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তর ঢাকা থেকে সরেজমিনে বিশেষজ্ঞ টিম এসে গেছে। নতুন নকশা পেলেই কাজ শুরু হবে।

সুত্র জানিয়েছে, যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া মোড় এলাকায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে বেরিয়ে গেছে বসুন্দিয়া-নড়াইল সড়ক। বসুন্দিয়া বাজারের শেষাংশে ভৈরব নদের দক্ষিণপাশ সদর উপজেলা ও উত্তরপাশ বাঘারপাড়া উপজেলা। আর এ দুই উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের ভৈরব সেতু। সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় তা পুনর্নিমাণের জন্য ২০২৩ সালের শুরুতে ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু আজও শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। সেতুর পাশে একটি বেইলি ব্রিজ করে দিলেও তা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না ভারী যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দুপাড়ের মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। সেতুর অভাবে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি তাঁদের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করতেন। এছাড়া পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কে দূরপাল্লার বাসসহ ভারী যানবাহন চলাচল বাড়ে দ্বিগুণ। নড়াইল ও খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ভারী যানবাহন চাড়াভিটা ঘুনির ঘাট সড়ক ব্যবহার করছে। ফলে এ সড়কে জানজট লেগে থাকছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছোট এ সড়কটি।

স্থানীয় আলাদিপুর বাজার কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ব্রিজটি ভেঙে ফেলার পর আমাদের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব সমস্যা হচ্ছে। যে বেইলি ব্রিজটি করে দেয়া হয়েছে সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ভোগান্তি বেড়েছে ।

বসুন্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ি বিশ্বজিৎ অধিকারী বলেন, বসুন্দিয়া একটি বৃহৎ হাট। এখানে কাঠাল , লিচু, পান, আম, ধান, চাল, পাটসহ বিভিন্ন দেশীয় ফলের বড় মোকাম। সারা বছর এই হাট জমজমাট থাকে। সেতুটি ভেঙে ফেলার পর ট্রাকে মালামাল আনা নেয়ায় সমস্যা হচ্ছে। অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে খরচ বেড়েছে। দ্রুত এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।

রফিকুল ইসলাম টুকু নামে একজন ব্যবসায়ি বলেন, ‘সেতুটি যশোর সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। ব্রিজের আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষ এই পথে চলাচল করেন। সেতুটি না থাকায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।’

যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ভৈরব নদের উপর সংযোগ সেতুটি ২০২৩ সালের শুরুতে ভেঙে ফেলা হয়। সে সময় থেকে নকশা জটিলতায় আটকে আছে নির্মাণ কাজ। নতুন নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে সরেজমিনে বিশেষজ্ঞ টিম এসে জরিপ করে গেছেন। মেয়াদ বৃদ্ধি করে নতুন নকশা পেলেই কাজ শুরু হবে।

Exit mobile version