এটি একটি নতুন ধরনের মেসেজিং অ্যাপ, যেটি পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকৃত (decentralized) ও পিয়ার-টু-পিয়ার (peer-to-peer) প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই অ্যাপটি চলার জন্য ইন্টারনেট, কেন্দ্রীয় কোনো সার্ভার, ফোন নম্বর বা ই-মেইলের প্রয়োজন পড়ে না। এটি কাজ করে ব্লুটুথ মেশ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে—অর্থাৎ কাছাকাছি থাকা ডিভাইসগুলো একে অন্যের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে বার্তা আদান-প্রদান করে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) দেওয়া একটি পোস্টে অ্যাপটির নির্মাতা জ্যাক ডরসি জানান, এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা টেস্টফ্লাইট নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে এই পরীক্ষামূলক সংস্করণটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেই সঙ্গে অ্যাপটির হোয়াইট পেপার বা প্রযুক্তিগত বিবরণী গিটহাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
হোয়াইট পেপার আসলে একটি বিস্তারিত নথি, যেখানে নতুন কোনো প্রযুক্তি বা অ্যাপ কীভাবে কাজ করে, তার উদ্দেশ্য কী, এবং এর প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ কীভাবে গঠিত—সবকিছু তুলে ধরা হয়। এ ধরনের নথি একজন ব্যবহারকারীকে বুঝতে সাহায্য করে যে, অ্যাপটি কীভাবে পরিচালিত হয় এবং এর কাঠামো কী।
ডরসি এই অ্যাপটিকে তার ব্যক্তিগত গবেষণার ফল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেছেন ব্লুটুথ মেশ নেটওয়ার্ক, রিলে সিস্টেম, ‘স্টোর অ্যান্ড ফরোয়ার্ড’ পদ্ধতি এবং উন্নত এনক্রিপশন (গোপনীয় বার্তা প্রক্রিয়াকরণ) কৌশল নিয়ে।
এই অ্যাপের মাধ্যমে কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে একটি অস্থায়ী, এনক্রিপ্ট করা সংযোগ তৈরি হয়। এর মানে হলো, মেসেজগুলো নিরাপদ থাকে এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা হয় না। যখন একজন ব্যবহারকারী চলাফেরা করেন, তখন তার ফোন আশেপাশের ফোনগুলোর সঙ্গে একটি ব্লুটুথ ক্লাস্টার তৈরি করে। এরপর একটি ফোন থেকে অন্য ফোনে বার্তা অদলবদল হতে থাকে। এভাবে, কোনো ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই বার্তাটি পৌঁছে যায় অনেক দূরের ব্যবহারকারীর কাছেও।
অ্যাপটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ‘ব্রিজ ডিভাইস’। এই ডিভাইসগুলো একাধিক ব্লুটুথ ক্লাস্টারকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করে পুরো নেটওয়ার্ককে আরও বিস্তৃত করে তোলে। প্রতিটি বার্তা শুধু ব্যবহারকারীর নিজস্ব ডিভাইসেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং ডিফল্টভাবে তা নির্দিষ্ট সময় পরে মুছে যায়। কোনো তথ্যই কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভারে জমা হয় না।
এই অ্যাপটি নির্মাণের মাধ্যমে ডরসি তার দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা রক্ষা এবং সেন্সরশিপ বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।