আমদানিনির্ভর জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগোচ্ছে ইউরোপ। ইউরোপের এই রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চীনের নতুন জ্বালানি খাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রতিযোগিতামূলক দামে সৌর প্যানেল সরবরাহ করে ইউরোপের গ্রিন এনার্জি স্বপ্নের গতি বাড়াচ্ছে চীন।
চীনের সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান লিন বোছিয়াং বলেন, ‘ইউরোপের নিজস্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সীমিত। ফলে চীনের মতো দক্ষ উৎপাদনশীল দেশের সহায়তা ছাড়া তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির হার ৪২.৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এখন যা ৩২ শতাংশ।
২০২৫ সালের ইনটারসোলার ইউরোপ এক্সপোতে ৫০টি দেশের ২,৭০০ কোম্পানির সঙ্গে অংশ নিয়েছিল চীনের ৮৫০টি প্রতিষ্ঠান। তারা সৌর প্যানেল, শক্তি সংরক্ষণ, ইভি চার্জিং ও ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি সলিউশন প্রদর্শন করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে।
চীনের শীর্ষ সৌর কোম্পানি লংচিজ গ্রিন এনার্জি নতুন ডিজাইনের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল উন্মোচন করে, যা কম আলোতেও কার্যকর এবং বেশ ভালো আগুন প্রতিরোধী।
লংচির বৈশ্বিক বিপণন প্রধান লিউ ইউসি বলেন, ‘ইউরোপ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে আগ্রহী হওয়ায় আমরা গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করছি।’
সম্প্রতি সমাপ্ত ফটোভোলটাইক শিল্পে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইভেন্ট ইন্টারসোলার ইউরোপ প্রদর্শনীতে চীনা কোম্পানিগুলি তাদের অত্যাধুনিক পণ্য এবং সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ক্ষমতার জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
প্রদর্শনীতে ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ২,৭০০টিরও বেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে চীনের প্রায় ৮৫০টি কোম্পানি ছিল। চীনের প্রদর্শকরা উচ্চ-দক্ষ পিভি মডিউল থেকে শুরু করে শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থা, ইভি চার্জিং অবকাঠামো এবং সমন্বিত শক্তি সমাধান পর্যন্ত বিস্তৃত উদ্ভাবন প্রদর্শন করেছিলেন।
২০২৪ সালে চীনের পিভি মডিউল রপ্তানি হয়েছিল ২৩৫.৯৩ গিগাওয়াট, যার মধ্যে ইউরোপে গিয়েছিল ৯৪.৪ গিগাওয়াট। সোলার-পাওয়ার ইউরোপ জানিয়েছে, বিশ্বে নতুন সৌর সক্ষমতার ৫৫ শতাংশই চীন থেকে এসেছে।
সোলারপাওয়ার ইউরোপ প্রকাশিত ‘গ্লোবাল মার্কেট আউটলুক ফর সোলার পাওয়ার ২০২৫-২০২৯’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে সৌর শিল্পে চীনের প্রবৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা বিশ্বব্যাপী এ সম্পর্কিত অন্যান্য প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশকেও বেগবান করেছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সৌরশক্তির বন্টন অত্যন্ত অসম রয়ে গেছে। কেননা, ২০২৪ সালে চীন একাই ৩২৯ গিগাওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বব্যাপী স্থাপনার ৫৫ শতাংশ।
জিসিএল হোল্ডিংস-এর ভাইস চেয়ারম্যান চু ইউফেং বলেন, ‘ইউরোপ আমাদের কাছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রপ্তানি নয়, স্থানীয় উৎপাদন ও পরিষেবার মাধ্যমেও আমরা ইউরোপের সবুজ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই।’
সূত্র: সিএমজি