একটা সময় ছিল, মাঠে গেলে দেখা যেত পিঠে ট্যাংক বয়ে কীটনাশক ছড়াচ্ছেন কৃষক, ঘাম ছুটে যাচ্ছে রোদের তাপে।এখন মাঠে দেখা যায় টুপি পরা তরুণ-তরুণী, হাতে কন্ট্রোলার, মাথার ওপরে শোঁ শোঁ করে উড়ছে ড্রোন! চীনের চাষবাসে লেগেছে তারুণ্যের ঝড়—প্রযুক্তির ষোলোআনা ব্যবহারে যারা দিচ্ছে না এক বিন্দু ছাড়।
২১ বছর বয়সী ওয়াং হুয়ানউত্তর চীনের শানসি প্রদেশের ইছেং কাউন্টির তরুণ। ছোটবেলা থেকেই কৃষিতে জড়িত।আগেকার দিনে পিঠে ওজনদার ট্যাংক টেনে সার বা কীটনাশক ছড়ানোর কথা তার মনে আছে। এখন দক্ষ ড্রোন চালক। একদিনেই ছড়িয়ে দিতে পারেন প্রায় দুই টন সার। আগে যে কাজ করতে তিনজনের লেগে যেত কমপক্ষে চার-পাঁচ দিন!
ড্রোনই শুধু নয়, ওয়াং এখন হারভেস্টার, সিডার ও খড়ের গাদা চাপ দেওয়ারবেলার মেশিন—সব আধুনিক কৃষিযন্ত্র চালনায় পারদর্শী।
অন্যদিকে, ২২ বছরের তিংচ্যহুইসদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েফিরেছেন নিজের গ্রামশানসির ওয়ানরং কাউন্টিতে। হয়েছেন ‘টেকি’ চাষি। স্থানীয় একটি কৃষিযন্ত্র পরিষেবা কো-অপারেটিভে যুক্ত হয়ে কিনেছেন বেইতৌ ন্যাভিগেশন সিস্টেমচালিত স্বয়ংক্রিয় সিডার মেশিন। দিন-রাত একটানা কাজ করতে পারে যন্ত্রটি। বীজবপন করতে পারে একদম নিখুঁতভাবে।
তিং বলেন, ‘এখনকার যন্ত্রগুলোতে এয়ার কন্ডিশন্ড কেবিনও থাকে। কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহারও সহজ।’
চীনের গ্রামীণ উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার এই উত্থানে জেনারেশন জি-এর তরুণ-তরুণীরা এখন হাল ধরছেন কৃষির। কারণ চীনের কৃষি মানেই এখন ঘাম ঝরানো নয়। জেন-জির ভাষায় এটি হলো ‘কুল প্রফেশন’। সেইসঙ্গে এআই, বিগ ডেটার উপরি পাওনা তো আছেই।
সরকারি তথ্য বলছে, চীনে এখন চাষাবাদ, বীজ রোপণ ও ফসল কাটার মোট যান্ত্রিকীকরণ হার ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২২ লাখের বেশি কৃষিযন্ত্র বেইতৌ ন্যাভিগেশন সিস্টেমে সজ্জিত।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং স্টেট কাউন্সিল একসঙ্গে ২০২৫ সালের জন্য ঘোষণা করেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে কৃষিতে চীনের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
আর এই লক্ষ্যপূরণে কৃষিকাজে জেন জি শুধু ফসল নয়, কন্টেন্টও ফোটাচ্ছে! চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন নিয়মিত ট্রেন্ড করছে জেনজিট্র্যাকটর ড্রাইভারস, স্মার্ট ফার্মিংউইথ ড্রোনস-এর মতো হ্যাশট্যাগুলো।