বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির সক্ষমতা জোরদার করতে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য (ইউকে)।
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের ব্রিটিশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এই আগ্রহ প্রকাশ করে। বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করা।
বৈঠকে উভয় পক্ষ পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, ভূগর্ভস্থ পানি নিঃশেষ হওয়া, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় কমিউনিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ম্যানগ্রোভ বন পুনরুদ্ধার এবং উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির সমস্যার সমাধানে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ করা এবং সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী মৎস্যজীবীদের জীবিকা রক্ষায় নতুন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর প্রচেষ্টার প্রতি যুক্তরাজ্যের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন,স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু অর্থায়নে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
আলোচনায় যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) বাজেট সমন্বয়ের বিষয়টিও উঠে আসে। সারা কুক আশ্বাস দেন যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল হলে যুক্তরাজ্য পূর্ববর্তী লক্ষ্যমাত্রা পুনঃস্থাপন করবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটেন বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বাংলাদেশের পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করবে।
বৈঠকের সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে লন্ডনে দুটি মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী অ্যানালিজ ডডস, এমপি, কর্তৃক আয়োজিত ‘ক্লাইমেট-ন্যাচার-ডেভলোপমেন্ট নেক্সাস-এর মাধ্যমে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠক এবং ১৩ মার্চ বাকিংহাম প্যালেসে মহামান্য রাজা কর্তৃক আয়োজিত ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট রিসিপশন।
উভয় পক্ষ জলবায়ু অর্থায়ন, টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ফোরামে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে জলবায়ু কর্মসূচিতে অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়, যাতে উভয় দেশের জন্য একটি টেকসই ও সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
পরে চীনের হেভি মেশিনারি কোম্পানির প্রতিনিধি চেং টিংইউ’র নেতৃত্বে একটি চীনা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সচিবালয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পরিবেশগত উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উন্নতমানের রাবার চাষ প্রযুক্তি সরবরাহের প্রস্তাব দেয়।