ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সরাসরি “না” বলেছে। এ প্রস্তাবটি ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেল এবং বাংলাদেশের দুই আইটিসি কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স ও ফাইবার অ্যাট হোমের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত হয়েছিল।
বিটিআরসির সিদ্ধান্ত এবং তার কারণ
প্রাথমিকভাবে বিটিআরসি এ প্রস্তাব অনুমোদনের পথে থাকলেও, পর্যালোচনার পর তারা তা বাতিল করেছে। বিটিআরসি মনে করছে, ট্রানজিট ব্যবহারের ফলে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং ভারত শক্তিশালী হাবে পরিণত হবে।
এছাড়া, প্রস্তাবটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি, যা এই উদ্যোগের যৌক্তিকতা, আইনি প্রেক্ষাপট, এবং বাণিজ্যিক বাস্তবতার প্রশ্ন তোলে।
বিটিআরসি আরও বলছে:
- বিদেশি গ্রাহকদের সেবা দিতে বা ট্রানজিট ব্যবহারের জন্য আইটিসি গাইডলাইনে কোনো বিধান নেই।
- গুগল, ফেসবুক, মেটার মতো সংস্থাগুলো যদি বাংলাদেশে এজড পপ স্থাপন করে, তাহলে এ অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবায় বড় সুযোগ তৈরি হবে। তবে এই ট্রানজিট অনুমোদন তাদের আগ্রহ কমিয়ে দেবে।
ট্রানজিট প্রস্তাবের পরিকল্পনা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, আসামসহ সাতটি রাজ্যে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়ার নো-ম্যানস ল্যান্ডে আন্তঃসংযোগ পয়েন্ট স্থাপনের কথা ছিল।
সামিট ও ফাইবার অ্যাট হোম কক্সবাজার ও কুয়াকাটার সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনে ফাইবার নেটওয়ার্ক সংযোগ দিতো, যা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতো। এই ব্যবস্থায় সেভেন সিস্টার্স থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগে সময় ও খরচ অনেক কমে আসার কথা ছিল।
ভারতের আগ্রহ
বর্তমানে ভারতের সেভেন সিস্টার্স থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত সংযোগের দূরত্ব প্রায় ৮৭০০ কিলোমিটার। তবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে এই দূরত্ব কমে ৩৭০০ কিলোমিটার হবে। ফলে ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত হবে এবং খরচ কমবে।
উদ্যোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, “এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট হাবে পরিণত হতে পারতো।”
সামিট কমিউনিকেশন্স এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
বিপক্ষের মতামত
বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, “এই উদ্যোগটি মূলত অবৈধ ট্রাফিকিংয়ের শামিল। আমরা যদি নিজেদের ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করি, তাহলে তা সরকারকে জানিয়ে বৈধ উপায়ে করা উচিত।”
খাত সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে মনে করেন, এ ট্রানজিট অনুমোদন দিলে দেশের ব্যান্ডউইথ খাতের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়তো।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এই নেটওয়ার্ক বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হতো। তবে এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিকগুলো আরও গভীরভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল।
এভাবে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য বিটিআরসি ট্রানজিট প্রস্তাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।