Friday, December 27
Shadow

ট্রান্সকমের সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গ্রুপটির বর্তমান সিইও সিমিন রহমান জাল দলিল ও ভুয়া স্বাক্ষর তৈরি করে ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ এককভাবে নিজের দখলে নিয়েছেন।

সিমিনের ছোট বোন শাযরেহ হকের অভিযোগ, এই প্রতারণার মাধ্যমে সিমিন তাঁদের মায়ের পেটের ভাই-বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিমিনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করেছেন, যার মধ্যে জালিয়াতি, প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রভাব খাটিয়ে সিমিন তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

সিমিন রহমান, শাযরেহ হক
সিমিন রহমান, শাযরেহ হক

অভিযোগের বিবরণ

ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো— মিডিয়া স্টার লিমিটেড (প্রথম আলো), মিডিয়া ওয়ার্ল্ড (ডেইলি স্টার), বাংলাদেশ ল্যাম্পস, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, পেপসিকোসহ মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠানের দখল সিমিন রহমান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা

শাযরেহ হকের দাবি, ২০২০ সালের ১ জুলাই লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর সিমিন ভুয়া দলিল ও পরিবারের সদস্যদের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সম্পত্তি নিজের নামে নেন। বিশেষত, ট্রান্সকমের শেয়ার হস্তান্তর এবং গুলশানে লতিফুর রহমানের ৩৫ কাঠা জমির ভুয়া হেবা দলিল তৈরি করেন তিনি।


তদন্তে উঠে আসা তথ্য

১. সিমিন রহমান ৭টি ভুয়া এফিডেভিট তৈরি করে শেয়ার হস্তান্তরের নথি আরজেএসসি-তে জমা দেন।
২. শেয়ার হস্তান্তরের নথিতে কুমিল্লার মৃত লতিফুর রহমানের ভুয়া স্বাক্ষরসহ অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।
৩. তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকার জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে স্ট্যাম্পগুলোর জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।


ভুয়া পারিবারিক সেটলমেন্ট

শাযরেহ হকের অভিযোগ, সিমিন রহমান একটি ভুয়া পারিবারিক সেটলমেন্ট দলিল তৈরি করেছেন, যেখানে লতিফুর রহমান, বড় ভাই আরশাদ ও ছোট বোন শাযরেহসহ তাঁদের সন্তানদের ভুয়া স্বাক্ষর রয়েছে।


তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, সিমিন রহমান জালিয়াতির প্রমাণ লুকাতে তদন্তে বাধা দিচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলায় মহানগর হাকিম আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হলেও সেটি খারিজ হয়। পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।


সিমিনের প্রতিক্রিয়া

অভিযোগ সম্পর্কে সিমিন রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী সিদ্দিকুল্লাহ মিয়া দাবি করেন, “অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। ২৩ হাজার শেয়ারের বিষয়টি সত্য হলেও এটি পারিবারিক বিষয় এবং আদালতে সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে।”


পটভূমি

প্রায় চার দশক আগে ট্রান্সকম গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন লতিফুর রহমান। তাঁর মৃত্যুর পর পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে এই বিরোধের সূত্রপাত হয়। বড় ভাই আরশাদ ও ছোট বোন শাযরেহ এই সম্পত্তির শরিয়া আইনের ভিত্তিতে ভাগাভাগি দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।


সংক্ষেপে অভিযোগ

  • ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ।
  • জাল দলিল ও ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার।
  • ট্রান্সকমের শেয়ার, গুলশানের জমি ও অন্যান্য সম্পত্তির দখল।
  • তদন্তে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা।

শায়রেহ হকের আইনজীবী বলেন, “সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত ভুয়া দলিলের মূল কপি তদন্তে সরবরাহ করা হলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *