একেএম নাজমুল আলম : প্রতিদিন সকালে বাড়ির উঠোনে ধূপ-ধুনো দিয়ে যাকে ঘিরে পূজা হয়, যার গন্ধে মন শান্ত হয়, সে গাছটি হলো তুলসী। শুধু ধর্মীয় বা আচারিক দিক থেকেই নয়, তুলসী গাছ এক অসাধারণ ঔষধি গাছ—যার গুণাবলি আজও অনেকের অজানা।
তুলসী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum sanctum বা Ocimum tenuiflorum। এটি Lamiaceae গোত্রভুক্ত একটি সুগন্ধিযুক্ত উদ্ভিদ। বাংলাদেশে সাধারণত দুটি প্রজাতির তুলসী দেখা যায়:
1. শ্যামা তুলসী (কালচে বর্ণ)
2. রাম তুলসী (সবুজ বর্ণ)
- * তুলসী পাতায় রয়েছে ইউজেনল, যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।
* তুলসী গাছ বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে, ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখে।
* তুলসীর গন্ধ মশা তাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায়।
- * প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তুলসীকে “জীবনের রক্ষাকবচ” বলা হয়েছে।
* তুলসী গাছ ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়ে—যা অত্যন্ত বিরল গুণাবলি।
১. সর্দি-কাশি ও ঠান্ডার মহাঔষধ:
তুলসীপাতা, আদা ও মধু দিয়ে তৈরি ক্বাথ সর্দি, কাশি, কণ্ঠস্বর খুসখুসে ভাব দূর করতে দারুণ কার্যকর।
২. জ্বর নিরাময়ে:
তুলসীপাতা, গোলমরিচ ও এলাচ সেদ্ধ করে পান করলে ভাইরাস জ্বর, টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া পর্যন্ত প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩. হৃদরোগ প্রতিরোধে:
তুলসী রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। তুলসী চা হার্টের জন্য উপকারী।
৪. মানসিক চাপ হ্রাস:
তুলসীর গন্ধ স্নায়ুকে শান্ত করে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। নিয়মিত তুলসী পাতা চিবালে উদ্বেগ ও ঘুমের সমস্যা কমে।
৫. ত্বক ও চুলের যত্নে:
তুলসী পেস্ট ব্রণ, র্যাশ ও ত্বকের ফুসকুড়ি কমায়। তুলসী তেল চুল পড়া রোধ করে ও খুশকি কমায়।
৬. রক্ত বিশুদ্ধকারী:
তুলসী রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* তুলসী গাছের চারপাশে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক জন্মাতে পারে না।
* ঘরের ভেতরে তুলসী গাছ রাখলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং পরিবেশ সুস্থ থাকে।
* তুলসী গাছ মশা-আক্রান্ত এলাকাতে প্রাকৃতিক রেপেলেন্ট হিসেবে কাজ করে।
তুলসী পাতা লোহার বাসনে রান্না করা উচিত নয়—কারণ এতে উপাদানগুলো নষ্ট হয়।
খালি পেটে তুলসী পাতা অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষত গর্ভবতী নারীদের।
তুলসী গাছ যেন প্রকৃতির এক অলৌকিক আশীর্বাদ। যার প্রতিটি পাতা ও গন্ধে রয়েছে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও এটি আজকের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি স্বীকৃত ভেষজ চিকিৎসা উপাদান। আমাদের সবার উচিত ঘরের পাশে একটি তুলসী গাছ লাগানো এবং এর ঔষধিগুণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
তুলসী গাছের উপকারিতা নিয়ে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতামূলক শিক্ষা চালু করা হলে পরবর্তী প্রজন্ম আরও স্বাস্থ্যবান ও পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠবে।