Site icon আজকের কাগজ

শরীরে ব্যথা হলে আরোগ্যের জন্য কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে কি করবেন

শরীরে ব্যথা হলে আরোগ্যের জন্য দোয়া

শরীরের কোনো স্থানে হঠাৎ ব্যথা করলেই আমরা হয় সাথে সাথে ব্যথার ওষুধ খেয়ে নেই না হয় ডাক্তারের কাছে যাই। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যথা ও রোগমুক্তির জন্য দোয়া পড়ে ফুঁ দেওয়া একটি সুপ্রচলিত ও সহিহ পদ্ধতি।কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং উম্মতকে তা শিক্ষা দিয়েছেন।

পেইন বা ব্যথার জায়গায় দোয়া পড়ে ফুঁ দেওয়া এই আমলটি নবীজি নিজে করতেন সহিহ মুসলিম ও সহিহ বুখারি-তে বর্ণিত একটি হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) বলেন:

“আমার শরীরে ব্যথা ছিল, আমি নবী (সা.)-এর নিকট অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন: ‘তোমার ব্যথার স্থানে হাত রাখো এবং তিনবার বলো, বিসমিল্লাহ (بِسْمِ اللهِ)। এরপর সাতবার বলো – “আউযু বিআজ্জাতিল্লাহি ও কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ও উহাযিরু” (أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ)।’” — সহিহ মুসলিম: হাদিস ২২০২, দোয়ার বাংলা অর্থ হল – “আমি আল্লাহর মহাশক্তি ও ক্ষমতার আশ্রয় চাই, যে কষ্ট বা ব্যথা আমি অনুভব করছি এবং যার আশঙ্কা করছি তা থেকে।”

এই দোয়াটি শরীরের ব্যথা বা যেকোনো অসুস্থতার জায়গায় হাত রেখে সাতবার পাঠ করে ফুঁ দিলে তা আরামদায়ক হতে পারে। এটি নবীজির শিক্ষা ও পরীক্ষিত আমল।

সূরা ফাতিহা: কুরআনের ‘রুকইয়াহ’ (আরোগ্যের দোয়া)

সূরা ফাতিহার ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে। কুরআনের মধ্যে সূরা ফাতিহাকে “শিফা” বা আরোগ্যের উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সহিহ বুখারির একটি বিখ্যাত হাদিসে সাহাবারা এক বেদুঈন প্রধানকে এই সূরা পড়ে ফুঁ দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। রাসূল (সা.) বলেন: “কোথা থেকে বুঝলে যে এটি (সূরা ফাতিহা) রুকইয়াহ?” — সহিহ বুখারি: হাদিস ২২৭৬, কিতাবুত-তিব। অর্থাৎ, কুরআনের এই সূরাটি শুধু নামাজে পাঠের জন্য নয়, বরং রোগের আরোগ্য কামনায়ও কার্যকর।

ফুঁ দেওয়া এটি একটি নবীজির সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সা.) রাতে ঘুমানোর সময় নিজ হাতে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন এবং নিজের শরীর মুছে নিতেন।

“নবী (সা.) রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় দুই হাত একত্র করে তাতে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করতেন এবং তাতে ফুঁ দিতেন। তারপর তা দ্বারা নিজের শরীর মুছে নিতেন।”
— সহিহ বুখারি: হাদিস ৫৭৪৮

ইসলামে ফুঁ দিয়ে দোয়া পড়া বা ‘রুকইয়াহ’ বৈধ, তবে কিছু সর্ত রয়েছে যেমন- যদি সেটি: কুরআন বা সহিহ হাদিসের দোয়া হয়, তাওহিদের ভিত্তির বাইরে না যায়, নির্ভরতা শুধুই আল্লাহর ওপর থাকে।

রাসূল (সা.) বলেছেন: “তোমাদের কেউ রুকইয়াহ (দোয়া দ্বারা চিকিৎসা) করলে, যেন তা শিরকমুক্ত হয়।” — সহিহ মুসলিম: হাদিস ২২০০

শরীরের ব্যথায় ফুঁ দিয়ে আরোগ্য লাভের যে আমলটি ইসলামি শরিয়তে রয়েছে, তা শুধু আধ্যাত্মিক বিশ্বাস নয়, বরং নবীজির সরাসরি শিক্ষা। মুসলিম সমাজে এটি এক ধরনের আত্মবিশ্বাস, যে প্রতিটি ব্যথা ও রোগ থেকে আরোগ্য একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। কুরআনের আয়াত ও রাসূলের দোয়ার মাধ্যমে ফুঁ দেয়া সুন্নাত ও বৈধ রুকইয়াহ হিসেবে আজও প্রাসঙ্গিক।

Exit mobile version