গ্রাম ঈশ্বরের দান। সবুজ-শ্যামল, শান্ত, ছায়াঘেরা, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, টইটুম্বুর খাল-বিলে নয়নাভিরাম শাপলা পদ্ম, পাখিদের কোলাহল, ঝিঁঝির ডাক আর জোনাকির স্বপ্নীল ওড়াউড়ির সম্মিলনে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার অন্তর্গত তুলাতলী গ্রামখানি— তেমনই এক মনোরম জনপদের নাম।
৯ জুন ২০২৫, একদল তরুণ তুর্কি এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধা তথা প্রবাসীদের যৌথ উদ্যোগে Run for Unity (2025) — Tulatali Runners কর্তৃক আয়োজিত 6.5K mini marathon এর মাধ্যমে তুলাতলী গ্রাম ও প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা আত্মপ্রকাশ করে। আয়োজিত ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করে ১৬টি গ্রাম থেকে আসা দুইশত অ্যাথলেট; যেখানে সব শ্রেণির মানুষের নিরবচ্ছিন্ন অংশগ্রহণ দেখার মতো ছিলো!
শিক্ষা উন্নয়ন, চিকিৎসা সহায়তা,পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতা ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা,যুব উন্নয়ন ও ক্রীড়ার প্রসার, যুবসমাজের সঠিক বিকাশ ও দিকনির্দেশনাকে প্রধান পাথেয় করে সংগঠনটি গঠিত হয়। সবিশেষ উল্লেখ্য, এই সংস্থার অধীনে পাচঁটি আন্তঃক্লাব রয়েছে। সদ্য নবগঠিত সংস্থার সভাপতি: মো. শাহজালাল ও তানভীর আহমেদ সবুজকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে আন্তঃক্লাব সমূহের পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। সংক্ষিপ্তসারে যদি বলি, এক. তুলাতুলী রানার্স ক্লাব (Tulatali Runners Club) যেখানে প্রতিবছর “Half Marathon” আয়োজন করবে; প্রতিদিন ভোরে শরীরচর্চায় উৎসাহিত করে এবং ভোরে উঠতে অনুপ্রাণিত করবে। দুই. গ্রিন রুটস ক্লাব ( Green Roots Club) , যেখানে গ্রামে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যক্রম করা। বলা বাহুল্য, একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক উদ্বিগ্নের অন্যতম নিয়ামক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই উদ্যোগ নিটোল ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তিন. তুলাতুলী ফ্রেন্ডস ক্লাব( Tulatoli Friends Club) যা গ্রামে ক্রীড়া ও খেলাধুলার আয়োজন পাশাপাশি আমাদের জাতীয় খেলা হাডুডু, জনপ্রিয় খেলা ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা প্রতিযোগিতামূলক খেলার আয়োজন করবে। চার. তুলাতুলী লাইব্রেরি ( Tulatoli Library), যেথায় গ্রামীণ পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বলা হয়ে, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। প্রমথ চৌধুরীর সেই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়ার নেপথ্যে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সর্বশেষ, যাকাত ফান্ড গঠন করা; যেখানে দুস্ত, অসহায়দের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থাটি নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের, জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী, মাহমুদুল হাসান রাফিদ বলেন, ” একটি তারুণ্য নির্ভর নির্ভীক প্রজন্মের জন্য সর্বাগ্রে মানসম্মত গ্রামের চাহিদা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত; সেই লক্ষ্যে তরুণদের উদ্যম আর অভিজ্ঞদের প্রজ্ঞায় সংগঠনটি এগিয়ে যাবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী—শিক্ষা, খেলাধুলা, বনায়ন, কুসংস্কার দূরীকরণ এবং সামাজিক ঐক্য ও সহনশীলতা নিশ্চিত করে এক সুন্দর, সচেতন তুলাতলীর স্বপ্নে।” আরেক উদ্যমী, নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব, যিনি লায়ন্স ক্লাব অফ ইন্টারন্যাশনালের সাধারণ সম্পাদক এবং তুলাতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, জনাব লোকমান হোসেন বলেন, ” এই সংগঠন শুধু উন্নয়ন নয়, আমাদের হৃদয়ের বন্ধন—যেখানে প্রবাসী আর স্থানীয় সবাই এক হয়ে তুলাতলীর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব।” বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মিনু বলেন, “এই সংস্থার মাধ্যমে আমরা তরুণরা শুধু গাছ নয়, স্বপ্নও রোপণ করছি—সবুজ, সুন্দর আর সচেতন তুলাতলীর জন্য।”
সর্বোপরি, এই নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ শুধু একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটা একটি ঐক্যের সূচনা, যেখানে গ্রামের মানুষ, প্রবাসী এবং তরুণ সমাজ একসাথে গ্রামের উন্নয়নের পথে পা ফেলেছে। গ্রামের সকল মানুষ এখন আশাবাদী—এই সংগঠন হবে তুলাতলীর জন্য এক নতুন ভোরের বার্তা। বৈষম্যহীন স্বপ্নের সোনার বাংলায় তরুণ তুর্কিদের সবান্ধব নিরেট নেতৃত্বে তুলাতলী গ্রামের যে নব-জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে— তার ধারাবাহিকতা চিরজাগরুক থাকুক।
মো. মারুফ মজুমদার
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
