আশরাফ গোলাপ (নেত্রকোনা): নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের জালিয়ার হাওরে নিষিদ্ধ ‘চায়না জাল’ স্থানীয়ভাবে ম্যাজিক জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে। এই জালের মাধ্যমে ছোট পোনা মাছসহ সকল ধরনের মাছ ধরা পড়ছে, যা দেশীয় মৎস্য সম্পদের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে। যা দেশীয় মাছের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের জালিয়ার হাওড়ে চায়না জাল দিয়ে অবৈধ ভাবে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক মাস ধরে জালিয়ার হাওরের বিভিন্ন খাল-বিলে এই জাল ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা হচ্ছে। বিকেল কিংবা সন্ধ্যার দিকে এজাল হাওড়ে পাতা হয় এবং খুব ভোরে তা তুলে ফেলা হয়। জালে যে প্রকৃতির মাছ দেখা যায়, তাদের পোনা জাতীয় বেশি।
বিশেষ করে বোয়াল মাছের বিপুল পরিমাণ পোনা ধরা পড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এভাবে এই মূল্যবান মাছটি ধরলে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
এবিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্যান্য বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন অভিযান চালিয়ে এসব নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত এব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে অবাধে মাছ ধরা অব্যাহত রয়েছে। মামুদপুর বাজারে ভোরে গিয়ে এসব মাছ বিক্রি হতে দেখা যায় বলে জানান এলাকাবাসী।
চারিতলা গ্রামের ব্যবসায়ী রাসেল মিল্কীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, অতি মুনাফালোভী কিছু জেলে এরকম অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে। তারা হাওরের নির্দিষ্ট স্থানে চায়না জাল ফেলে প্রতিদিনই দেশিয় পোনামাছ ধরছে। অথচ দেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী এই ধরনের ক্ষতিকর জাল ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অফিসের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে মাছ ধরার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য জোর দাবী জানান তিনি।
পরিবেশবিদ আয়েশ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এটি শুধু মাছ নয়, পুরো জলজ পরিবেশব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
মাছের বংশবৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দেশের মৎস্য ভাণ্ডার রক্ষায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিকভাবে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ।
কেন্দুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন,চায়না জাল দিয়ে অবৈধভাবে পোনামাছ ধরার বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এজাল দিয়ে মাছ ধরা দেশের মৎস্য আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও অবৈধ। তাছাড়া এজাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা মাছের প্রজনন ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। যারা অবৈধ চায়না জাল দিয়ে পোনামাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিবেন বলে তিনি জানান।