পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত বাঁধ ফের ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে অতিরিক্ত পানির চাপে ভারতের অংশে থাকা আত্রাই ড্যামের মেরামতকৃত অংশ ভেঙে গেলে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আত্রাই নদীর পানি দ্রুত বেড়ে গেছে। তারই চাপ সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়ে সদ্য মেরামত করা অংশটি। নদীর আশপাশের গ্রামগুলোতে ইতোমধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানি আরও বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুরোপুরি ধসে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জনপদ প্লাবিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, আত্রাই নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্বাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই আন্তঃসীমান্ত নদীটি উভয় দেশের জনপদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানি নিয়ন্ত্রণ ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় অসহমতি ও অভিযোগ দেখা দিয়েছে।
ভারতীয় প্রশাসনের অভিযোগ, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আত্রাই নদীর ওপর স্থাপিত রাবার ড্যাম ভারতের অংশে বারবার বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বছর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদীতে ছোট আকারে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই প্রাথমিক পর্যায়ে সেই বাঁধ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর জোরেশোরে মেরামতের কাজ চলছিল, যা ফের ধসে পড়লো।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। ড্যামের আশপাশে থাকা গ্রামগুলোর মানুষজন ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ড্যাম ভেঙে পড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার। তিনি বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বলেন, “এই ড্যামে বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত নিম্নমানের টিএমটি রড ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলেই বাঁধ ভেঙেছে। এটা চরম দুর্নীতির ফল। আমরা চাই, প্রশাসনিক পর্যায়ে এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক।”
অন্যদিকে, বালুরঘাট পৌরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি পাল্টা মন্তব্য করে বলেন, “বাঁধ ভাঙার পেছনে কোনো মানুষের হাত নেই। প্রকৃতি ও অতিবৃষ্টির প্রভাবেই এ ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতির অভিযোগের আগে বিজেপিকে নিজেদের ঘরে নজর দেওয়া উচিত। বালুরঘাট রেলস্টেশনে তৃতীয় শ্রেণির লিড ব্যবহার করে যে কাজ হচ্ছে, সেটাও কি দুর্নীতি নয়?”
রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন আত্রাই নদী পাড়ের সাধারণ মানুষ। তারা দ্রুত ড্যামের পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ এবং একটি টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্রাই নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায় প্রতিবছর এমন দুর্ভোগ সীমান্তের দুই দেশের বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে।