প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেন দুবাইতে—ব্যবসা, ছুটি ও কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। সুসজ্জিত বিনোদনের সঙ্গে বিলাসবহুল গন্তব্য হিসেবে এর খ্যাতি থাকলেও, অনেকের ধারণা, দুবাই ভ্রমণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয় এবং ভিসা পাওয়াতাও দুষ্কর। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই শহরে সবার জন্য কিছু না কিছু রয়েছে—পরিবার, বন্ধু বা দম্পতি—যে কেউই খুঁজে পাবেন তার নিজের মতো আনন্দের ঠিকানা। বিনদনের এক স্বর্গ রাজ্য।
পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময়: দুবাই ভ্রমণে পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সমুদ্র সৈকত। জেবিআর (JBR) বীচ খুবই নিরাপদ এবং সব বয়সীদের জন্য বীচটি উপযুক্ত। সেখানে সমুদ্রের মাঝে বিশাল আকৃতির ওয়াটার পার্ক তৈরি করা হয়েছে, এখানে পুরো পরিবার সাঁতার কাটা, স্লাইড করা এবং লাফিয়ে মজার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
পরিবারের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো দুবাই মল। কি নেই এই মলে? এখানে রয়েছে কিডজানিয়া এবং সেগা রিপাবলিক। কিডজানিয়া হলো শিশুদের জন্য তৈরি একটি ছোট্ট বিশ্ব, যেখানে তারা ৮০টিরও বেশি পেশার কাজ অনুকরণ করতে এবং শিখতে ও অভিজ্ঞতা নিতে পারে। অন্যদিকে, সেগা রিপাবলিক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য অসাধারণ এক স্থান। সনিক হপার, হাফপাইপ ক্যানিয়ন বা ওয়াটার পিস্তল গেমস—সবই পরিবারের সবার জন্য চমৎকার রোমাঞ্চ।
দুবাই মলে আরও দেখতে পাবেন ২২-স্ক্রিনের বিশাল সিনেমা থিয়েটার, বরফের রিংক-এ স্কেটিং এবং সন্ধ্যায় দুবাই ফাউন্টেনের মনোমুগ্ধকর নৃত্য। এছাড়াও, অ্যাটলান্টিসের ডলফিন বে-তে ডলফিনের সঙ্গে সাঁতার কাটা এবং তাদের সঙ্গে খেলা করার সুযোগতো রয়েছে।
দম্পতিদের জন্য রোমান্টিক গন্তব্য: দুবাই দম্পতিদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়। বিমান থেকে নেমেই সমুদ্র সৈকতে গিয়ে রৌদ্রস্নানে মগ্ন হওয়া দারুণ এক অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে আসবে। অনেক রিসোর্টের নিজস্ব ব্যক্তিগত বীচ রয়েছে, যা শুধুমাত্র অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া, দুবাইয়ের বেশিরভাগ রিসোর্টে দম্পতিদের জন্য আলাদা প্রাইভেট স্পা-এর ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে মুসলিম পরিবারদের জন্য ও ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।
পরদিন সকালেই দুবাইয়ের সোনালি মরুভূমি উপভোগের জন্য হট এয়ার বেলুনে চড়ে আকাশে উড়তে পারেন। সূর্যোদয়ের সেই অপূর্ব দৃশ্য আপনার সফরকে করে তুলবে স্মরণীয়। দিনের পরতে পরতে রোমান্টিক মুহূর্ত বাড়াতে পারেন বুর্জ খলিফার ১২২ তলায় অবস্থিত ‘অ্যাটমোস্ফিয়ার’ রেস্তোরাঁয় দুপুরের চা পান করে।
দুবাই ভ্রমণে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন চমৎকার কোনো স্বর্ণের অলংকার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণবাজার দেইরার গোল্ড সুক কিংবা আধুনিক গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড পার্ক-এ আপনি পেয়ে যাবেন স্বর্ণের দারুণ সব ডিজাইন। এখানেই দেখতে পাবেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের আংটি যার পাশে দেখতে পাবেন গ্রিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সার্টিফিকেট।
বন্ধুদের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ: বন্ধুদের সঙ্গে দুবাই ভ্রমণ মানেই অ্যাডভেঞ্চার! যদি সাহসী হয়ে থাকেন তবে, দিনের শুরুতেই যেতে পারেন স্কাইডাইভ দুবাই-তে। ১৩,০০০ ফুট উপরে পাম জুমেইরাহর উপর থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সেই মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
যারা গাড়ি ভালোবাসেন, তাদের জন্য দুবাই অটোড্রোম একটি চমৎকার স্থান। এখানে আপনি Audi R8 V10 বা বিশেষভাবে তৈরি সিঙ্গেল সিটার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। আরও উত্তেজনা চাইলে, ওয়েকবোর্ডিং বা ওয়েকসার্ফিং-এর মজাও নিতে পারেন।
সন্ধ্যা হলে একটু শান্ত পরিবেশে যেতে পারেন দুবাইয়ের মরুভূমি সাফারিতে। এখানে কোয়াড বাইক নিয়ে বালুর সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য দুবাইয়ের ঐতিহ্য: দুবাইয়ের ইতিহাসে ডুবে যেতে চাইলে প্রথমেই যেতে হবে আল ফাহিদি ঐতিহাসিক এলাকা। ১৮৫০ সালে শহরের প্রথম বিত্তবান ব্যবসায়ীরা এখানে বসতি স্থাপন করেন। এখানকার উইন্ড টাওয়ার বিশিষ্ট বাড়িগুলো প্রাচীন আরব স্থাপত্যের সাক্ষী যা মন ছুঁয়ে যাবে।
এরপর যেতে পারেন দুবাই মিউজিয়াম, যেখানে দুবাইয়ের অতীত জীবনের চিত্র পাওয়া যাবে। ঐতিহাসিক শিন্দাঘা এলাকা ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। এখানেই রয়েছে শেখ সাঈদ আল মাকতুমের বাড়ি, যা বর্তমান শাসকের পূর্বপুরুষের বসতবাড়ি হিসেবে পরিচিত।
প্রাচীন বাজারের ঐতিহ্য: যদি সময় থাকে, তাহলে ঘুরে দেখতে পারেন দুবাইয়ের ঐতিহ্যবাহী সৌক বা বাজারগুলো। বুর দুবাই এলাকার টেক্সটাইল সৌক থেকে রেশমি কাপড় সংগ্রহ করতে পারেন। এরপর অবরা নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী কাঠের নৌকায় চড়ে দেইরার স্পাইস সৌক এবং গোল্ড সৌক-এ পৌঁছে যান।
দুবাই—এক শহরেই সব কিছু: বিলাসিতা, বিনোদন, ইতিহাস ও সংস্কৃতি—সব কিছু একসঙ্গে উপভোগ করতে চাইলে দুবাইয়ের কোনো বিকল্প নেই। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় দুবাইকে রাখলে আপনি ফিরে পাবেন এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। যা আপনার জীবনকে করবে পরিপূর্ণ।